সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: স্টেশন থেকে সিটি সেন্টার ২০০ টাকা। সিটি সেন্টার থেকে ইস্পাত নগরীর যে কোনও জায়গায় ১৮০ টাকা। না, দূরপাল্লার বাস বা ট্রেনের টিকিটের ভাড়ার কথা বলা হচ্ছে না। দুর্গাপুরে সন্ধে নামলেই রুটের অটোর ‘রিজার্ভ’ ভাড়ায় নাকাল সাধারণ মানুষ। যে যেমন খুশি ভাড়া হাঁকাচ্ছে। রাতের দিকে অন্য কোনও যানবাহনের অভাবে সেই ভাড়া গুনেই যেতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা।
সকালে সব ঠিকঠাক। নির্দিষ্ট রুটের অটোভাড়া সাধ্যের মধ্যেই থাকছে। কিন্তু সন্ধে নামলেই অটো চালকদের দৌরাত্ম্য সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ এমনটাই। দুর্গাপুরে প্রায় বছর ৭ হল সিএনজি অটো পরিষেবা শুরু হয়েছে। মিনিবাসের সঙ্গে বেশ টক্কর দিচ্ছে প্রায় হাজার তিনেক সিএনজি অটো। অভিযোগ, অন্যান্য গণ পরিবহণে নির্দিষ্ট ভাড়ার চার্ট থাকলেও, অটোতে তা নেই। রুটের অটোরও কোনও চার্ট নেই। সকালের অটোই সন্ধে নামলেই নিজস্ব রুট ছেড়ে রিজার্ভের পথে হাঁটছে। যে যেমন খুশি ভাড়া হাঁকিয়ে রিজার্ভে চলছে।
রাতে এমনিতেই দুর্গাপুরের যানবাহনের অভাব দেখা যায়। বন্ধ হয়ে যায় মিনিবাসও। আর এই সুযোগেই শুরু হয় অটোর ‘রাম রাজত্ব’। যাত্রীদের অভিযোগ, শেয়ারে যেতে চাইলেও অটোচালকরা রিজার্ভে যেতে বাধ্য করেন। পরিবার নিয়ে ফাঁকা রাস্তায় অপেক্ষামান যাত্রীদেরও রিজার্ভেই যেতে হয়। একসঙ্গে বেশি যাত্রী থাকলে অটো চালকরাই অন্য অটো ডেকে নেন। তারপর রিজার্ভে তাঁদের গন্তব্য পৌঁছে মোটা টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ।
এমনই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন সুমনা বিশ্বাস, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক মহিলা। তিনি রাত ন’টা নাগাদ ট্রেনে দুর্গাপুর স্টেশনে নামনে। রিজার্ভ অটোর তিক্ত অভিজ্ঞতা শোনা গেল তাঁর মুখেই। তিনি জানান, “বহুবার অনেক যাত্রী মিলে অটো শেয়ার করে সিটি সেন্টার বা ইস্পাত নগরীতে যেতে চেয়েছি। কিন্তু একজনকেই রিজার্ভ করে যেতে হবে, এই দাবি করেন অটো চালকরা। আবার রিজার্ভের ভাড়াও একেকদিন একেক রকমের।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “রিজার্ভের বিরোধিতা করলে দুর্ব্যবহার জোটে। অন্য কোনও উপায় না থাকায় বাধ্য হয়েই যেতে হয়।” তাঁর কাছ থেকে একবার স্টেশন থেকে সিটি সেন্টার যাওয়ার জন্য তিনশো টাকা ভাড়া আদায় করা হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন সুমনা দেবী।
রিজার্ভে যে রুটের অটো চলাচল করে, তা বিলক্ষণ জানে অটো সংগঠন। শুধু জানেই নয়, সমর্থনও আছে। দুর্গাপুর মহকুমা অটো ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ বিশ্বাসের কথায়, “রাতে যাত্রীর অভাবে রিজার্ভে যেতে হয়। তবে শেয়ারের খরচেই যায় অটো। ইদানিং অতিরিক্ত রিজার্ভের ভাড়া চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। যারা চাইছে, তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। সংগঠন থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” রুটের অটো রিজার্ভে চলাকে ‘বেআইনি’ অ্যাখ্যা দিয়ে দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক অনির্বাণ কোলে আশ্বাস দেন, “রুটের অটো রিজার্ভে চলানো যায় না। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এছাড়া অটো সংগঠনের সঙ্গেও এই ব্যাপারে কথা বলব।”
ছবি: উদয়ন গুহরায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.