বাঁকুড়ার বালুচরি শাড়ি।
টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: পাওয়ার লুমে মিলছে বালুচরি শাড়ি। নাম বদলে তা এখন স্বর্ণমুখী শাড়ি। আর এই শাড়ির দাপটে পিছু হটছে বাঁকুড়ার ঐতিহ্যমণ্ডিত বালুচরি শাড়ি। এককথায় স্বর্ণমুখীর দাপটে বস্ত্রশিল্পের বাজারে টিকে থাকাই দায় হয়েছে বালুচরির শিল্পীদের। এমনিতেই ঘন কাজে ঠাসা একটি বালুচরি হাতে বুনতে বেশ সময় লেগে যায়। সেখানে মেশিনে বোনা স্বর্ণমুখী এক একজন দিনেই দুটো-তিনটে শাড়ি তৈরি করে ফেলতে পারেন। চাহিদা অনুযায়ী জোগানের সমস্যা হয় না। সেই সঙ্গে দামও খানিকটা কম। সব মিলিয়ে বালুচরির বাজার টেনে নিচ্ছে স্বর্ণমুখী। নাম যতই আলাদা হোক না কেন। দেখতে আসল বালুচরি শাড়ির মতোই। সেই বাঁকুড়ার টেরাকোটা শিল্পীদের নকশা, পৌরাণিক কাহিনীর নানা বিভঙ্গ। অনেকেই বালুচরি ভেবে স্বর্ণমুখী কিনছেন। এসবের কারণেই প্রতিযোগিতার বাজার থেকে পিছিয়ে পড়ছেন হস্তচালিত তাঁতশিল্পীরা। পিছিয়ে পড়ছে বাঁকুড়ার গর্ব বালুচরি শাড়ি।
উল্লেখ্য, গত বছর দুর্গাপুজোর আগেভাগেই পাওয়ার লুমে বালুচরি শাড়ির কাজ শুরু হয়। পুজোতেই অল্পস্বল্প পরিচিতি তৈরি করে ফেলেছিল স্বর্ণমুখী। এবছর সেই স্বল্প পরিচিতিকে কাজে লাগিয়েই পুজোর বাজার মাত করে দিয়েছে পাওয়ার লুমের স্বর্ণমুখী। এমনিতেই আটের দশক থেকে বালুচরির বাণিজ্যিকীকরণ কমে আসায় রীতিমতো ক্ষতির মুখে বাঁকুড়ার তাঁতশিল্পীরা। সেই পরিস্থিতি থেকে গত ১০ বছরে একটু একটু করে লাভের মুখ দেখছিলেন বাঁকুড়া শহর, রাজগ্রাম, ইন্দপুরের তাঁতশিল্পীরা। কিন্তু গতবছর থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসা স্বর্ণমুখী শিল্পীদের মনে আশঙ্কার মেঘ জমিয়েছিল। এবছর সেই মেঘ কালো করে আকাশ ছেয়েছে। যেকোনও দিন আসল বালুচরি শাড়ির বাজারই কেড়ে নিতে পারে এই স্বর্ণমুখী। আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন শিল্পীরা। এনিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশও হয়েছে। রুটি-রুজিতে অশনি সংকেত পাওয়া মাত্রই আন্দোলনে নেমেছেন হস্তচালিত তাঁত শিল্পীরা। ‘হস্ততাঁত বাঁচাও কমিটি’ নামে পৃথক কমিটি গড়ে তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন। জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক ভেলুরাম পাল বলছেন ‘জিআই পেটেন্ট থাকা সত্বেও এই শিল্প পাওয়ার লুমে গেল কীভাবে। সরকারি উদ্যোগে এই পাওয়ার লুমে বোনা এই ‘স্বর্ণমুখী’শাড়ি বন্ধ করা হোক।’
এদিকে ফের বালুচরির হৃতগৌরব ফেরাতে শাড়ির নকশাতেও বৈচিত্র আনতে চলেছেন শিল্পীরা। মোঘল আমলকে বালুচরির আঁচলে বাঁধতে শুরু হয়েছে তোরজোর। এর আগে সরকারি নির্দেশিকা মেনে কবিগুরু কবিতাকে বালুচরির নকশায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন তাঁতশিল্পীরা। তবে সেই প্রয়াস লাভের মুখ দেখায়নি। সুদিনের আশায় তাই ফের চেনা গণ্ডিতে ফিরতে চলেছেন শিল্পী ঝুমা পাল, অমিতাভ পাল, পবিত্র লোহরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.