পলাশ পাত্র, তেহট্টঃ গল্প ফেঁদেও শেষ রক্ষা হল না। এটিএমে টাকা ভরতি করার কাজে নিযুক্ত কর্মীরা আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে অবশেষে ধরা পড়লেন নদিয়ার নাকাশিপাড়ায়। চারজনকে আটক করে শুরু হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ। আর্থিক তছরূপের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৯ এবং ৪০৯ নং ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে স্বয়ং জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার।
এজেন্সির গাড়ি আটকে নিরাপত্তারক্ষী-সহ তিনজনকে মারধর করে ৪৫ লক্ষ টাকা ছিনতাই করেছ দুষ্কৃতীরা। এই গল্পই ফেঁদেছিলেন এটিএমে টাকা ভরার কাজে নিযুক্ত জনা কয়েক কর্মী। শুক্রবার রাতে নাকাশিপাড়া থানার আড়বেতাইয়ে এই ঘটনা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে জানিয়েছিলেন গাড়িতে থাকা তিন কর্মী। ঘটনা ঘিরে প্রশাসনিক মহলে যথারীতি তোলপাড় শুরু হয়। এলাকার নিরাপত্তায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এই ঘটনায় পুলিশ গাড়ির চালক, কাস্টডিয়ান সহ চারজনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। শুরু হয় জেরা।শনিবার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা এসআইএস-এর ম্যানেজার চার জনের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ আনেন।এরপরই ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। পুলিশ নড়েচড়ে বসে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্কের অধিকাংশ এটিএম সেন্টারগুলোয় টাকা ভরতির কাজটা করে কয়েকটি এজেন্সি। তার মধ্যে অন্যতম এসআইএস। শুক্রবার সকাল থেকে এই এজেন্সির কর্মীরা গাড়ি নিয়ে কৃষ্ণনগর, নবদ্বীপ, নাকাশিপাড়া থানা এলাকার এটিএম গুলিতে টাকা ভরার পর কালীগঞ্জের মাটিয়ারির এটিএমে টাকা ভরেন। সেখান থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরের নাকাশিপাড়ার আড়বেতাই এলাকায় তাঁরা পৌঁছান রাতে। এক কিলোমিটার দূরে পলাশিপাড়া থানার বার্ণিয়ার একটি এটিএমে টাকা ভরার জন্য গাড়িটি দ্রুত গতিতে ছুটছিল। এরপর তাঁদের অভিযোগ, আচমকা দুষ্কৃতীরা মোটরবাইকে এসে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দুই নিরাপত্তারক্ষী, গাড়ির চালককে মারধর করে ৪৫ লক্ষ টাকার একটি ব্যাগ নিয়ে চলে যায়। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। শুরু হয় তদন্ত।
কিন্তু শনিবার এজেন্সির ম্যানেজারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এদের বাড়ি চাপড়া, কোতোয়ালি, কালীগঞ্জ ও নবদ্বীপ থানা এলাকায়। গাড়িতে ছিল না কাস্টডিয়ান। তার বাড়ি নবদ্বীপ থানা এলাকায়। শুক্রবার গাড়িতে ছিল দুই নিরাপত্তারক্ষী সহ তিনজন। জেরার সময়ে চারজনের বক্তব্যে অসামঞ্জস্য টের পাওয়া যায়। কয়েকটি বিষয় পুলিশকে ভাবায়। কীভাবে দ্রুতগতির ওই গাড়িকে দাঁড় করানোর বিষয়টি নিয়ে। কারণ, অত রাতে গাড়ির সামনে গাছ, বড় পাথর বা ওই জাতীয় কিছুই ছিল না। তারপরও শুধুমাত্র গাড়ি থামাতে বলায় কীভাবে ওই গাড়ি থেমে গেল? দুই নিরাপত্তারক্ষীর হাতে অস্ত্র ছিল। সেই অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও তাঁরা অস্ত্র ব্যবহার করে অতগুলো টাকা ছিনতাই রুখতে পারলেন না? এমনকি ওই টাকা ভল্টেও ছিল না। ছিল গাড়ির কেবিনে। কিন্ত কেন টাকা ভল্টে রাখা হল না, এসব প্রশ্ন তদন্তকারীদের ভাবায়। পুলিশ সুপার রূপেশ কুমারের প্রাথমিক অনুমান, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। নিজেরা টাকা নয়ছয় করে গল্প বানিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। পুলিশ দ্রুত এর কিনারা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন এসপি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.