ছবি: প্রতীকী
রিন্টু ব্রহ্ম, কালনা: মূলত বয়স্ক ও চলতি ভাষায় টেক স্যাভি নন, এমন ব্যক্তিরাই ছিলেন সফট টার্গেট। তাঁদের অজ্ঞতা ও সরলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত একদল যুবক। সুযোগ বুঝে জেনে নিত এটিএমের পিন নম্বর। এরপরই হাতের কারসাজিতে বদলে নিত এটিএম কার্ডও। সেই কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলেই চলত নিত্যদিনের খরচ ও শখ পূরণ। এভাবেই দিব্যি দিন কাটাচ্ছিল এটিএম প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত যুবকরা। কিন্তু ভাড়া করা গাড়িই কাল হল তাদের। সিসিটিভিতে ধরা পড়া গাড়ির নম্বরের সূত্রেই পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের জালে ধরা পড়ে গেল এই প্রতারণা চক্রের চার দুষ্কৃতী।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৭ আগস্ট কুসুমগ্রামে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে গিয়েছিলেন বোরহান নামে এক ব্যক্তি। সেই সময় কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়েছিল অভিযুক্ত সুজিত। সে বোরহানকে জানায়, এটিএমের মাধ্যমে অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে তা চেক করার পর কার্ড লক করতে হয়। না হলে যে কেউ টাকা তুলে নিতে পারে। সুজিতের কথায় ভুলে যান বোরহান। এরপর কীভাবে কার্ড লক করতে হবে তা দেখিয়ে দেওয়ার আছিলায় পিন নম্বর জেনে নেয় সুজিত। তার পর কার্ড পাঞ্চ করার নামে তা হাতিয়ে নিয়ে অন্য একটি কার্ড ধরিয়ে দেয় বোরহানকে। পরেরদিন টনক নড়ে বোরহানের। জানতে পারেন তাঁর অ্যাকাউন্ট এক লক্ষ টাকারও বেশি তুলে নেওয়া হয়েছে। মেয়ের বিয়ের জন্য তিল তিল করে জামানো টাকা এইভাবে খুইয়ে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁর। মন্তেশ্বর থানার পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি।
এরপর ৮ আগস্ট মন্তেশ্বর থানার কুসুমগ্রামের চৌধুরি আবদুল বোরহানের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে ৪ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম সুজিত মণ্ডল(২১), রোহিত খান(১৯), অমিত পাইক(১৯), সৌরভ মণ্ডল(২২)। সোমবার তাদের কালনা আদালতে পেশ করা হলে ধৃত সুজিতকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। বাকি অভিযুক্তদের ৬ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সৈকত ঘোষ বলেন, “আমরা কুসুমগ্রামের ঘটনার তদন্তে নেমে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করেছিলাম। সেই সূত্র ধরে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছি। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। চক্রের বাকি পাণ্ডাদের খোঁজ চলছে।”
জানা গিয়েছে, বোরহারের এটিএম ব্যাবহার করে একটি পেট্রোল পাম্প থেকে গাড়িতে তেল ভরে অভিযুক্তরা। সিসিটিভি ফুটেজে সেই মারুতি গাড়ির হদিশ পায় পুলিশ। সেই সূত্র ধরেই সোনারপুরেই গাড়ি মালিকের হদিশ মেলে। সেখানে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে ওই গাড়ি ভাড়া নিয়েছিল সুজিত। এরপর পুলিশের জালে ধরা পড়ে সুজিত। তার থেকে হদিশ মেলে বাকিদের। জানা যায়, বোরহানের এটিএম কার্ড ব্যবহার করে বীরভূমের রামপুরহাটে একটি গয়নার দোকান থেকে সোনার চেনও কেনে দুষ্কৃতীরা। শপিং মল থেকেও কেনাকাটা করা হয়।
ধৃতদের জেরা করে প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, রীতিমত প্রশিক্ষণ নিয়ে এই পেশায় নেমেছিল তারা। এর আগে বারুইপুর এলাকায় একইভাবে প্রতারণা করেছে তারা। জেরায় ধৃতরা জানিয়েছে, তাদের কাজ ছিল গাড়ি ভাড়া নিয়ে গ্রামীণ এলাকায় যাওয়া। সেখানে এটিএম ব্যবহারে পারদর্শী নন, কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমস্যা পড়েন এমন সরল মানুষদের টার্গেট করা। তারপর সাহায্যের নাম করে কার্ড ও অন্যান্য তথ্য হাতিয়ে নেওয়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.