Advertisement
Advertisement
Swasthya Sathi

‘স্বাস্থ্যসাথী’র বিলে ব্যাপক দুর্নীতি! পূর্ব মেদিনীপুরের ৯৩ জন চিকিৎসককে শোকজ

যদিও চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, আর জি কর কাণ্ডে পথে নামায় এই 'প্রতিশোধ'।

Atleast 93 doctors showcaused by disctrict health department allegedly corruption in Swasthya Sathi bill
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 30, 2024 9:08 pm
  • Updated:August 30, 2024 9:14 pm

সৈকত মাইতি, তমলুক: আর জি কর কাণ্ড নিয়ে রাজ্যজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ এবার প্রকাশ্যে এল। আর অভিযোগ উঠতেই কোপের মুখে পড়তে চলেছেন শতাধিক চিকিৎসক। সেইসঙ্গে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষও। এই দুর্নীতির তদন্তের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে একসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রায় ৯৩জন চিকিৎসককে শোকজ করল জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। বাদ যাননি জেলা সদর শহর তমলুকের নামীদামি চিকিৎসকরাও। নোটিস ধরানো হয়েছে ৭০ টি নার্সিংহোমকে। স্বাভাবিকভাবেই এমন ঘটনায় জেলার চিকিৎসক মহলে তীব্র শোরগোল পড়েছে।

জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর (East Midnapore) জেলার শুধুমাত্র সদর শহর তমলুকেই মেডিক্যাল কলেজ সংলগ্ন ৩ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৭৯ টি নার্সিংহোম। এছাড়াও জেলার পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, হলদিয়া, চণ্ডীপুর, কাঁথি ও এগরা-সহ বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে আরও বেশ কিছু নার্সিংহোম। আর এই নার্সিংহোমগুলি থেকে বহু ক্ষেত্রেই নিয়মিতভাবে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ডের পরিষেবা দেওয়া হয়ে থাকে। আর এই চিকিৎসা পরিষেবায় রয়েছেন জেলা সদর শহরের একঝাঁক নামীদামি চিকিৎসক। কিন্তু সম্প্রতি নার্সিংহোমগুলির এই ‘স্বাস্থ্যসাথী’র বিল খতিয়ে দেখতে গিয়ে সামনে চলে আসে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। এক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্টকে (Clinical Establishment Act) বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কেউ ১৫ থেকে ২৯টি নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে একাধিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: রুশ হামলায় চূর্ণ এফ-১৬ যুদ্ধবিমান! মার্কিন ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হারিয়ে চাপে ইউক্রেন]

শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যসাথী (Swasthya Sathi) কার্ডে ৫০ থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দুটি নার্সিংহোমে একই দিনে একই সময়ে একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে অপারেশন করানোর ‘ভূতুড়ে’ বিল জমা পড়েছে! কীভাবে এটা সম্ভব? এই প্রশ্নে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকদের যোগসাজশের দুর্নীতি সামনে চলে আসে। সূত্রের খবর, নাসিংহোম কর্তৃপক্ষের জমা দেওয়া স্বাস্থ্যসাথী বিলগুলির অনুমোদন দেওয়ার সময় সম্প্রতি জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজির নজরে চলে আসে বেশ কিছু বেনিয়ম। যা নিয়ে রীতিমতো তিরস্কার করে স্বাস্থ্য দপ্তরকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন তিনি। তার পরই ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট ভাঙার অভিযোগে একযোগে ৯৩জন চিকিৎসককে চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা তলব করেছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (CMOH)। সেই চিঠি পাঠিয়ে কীভাবে এতগুলি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত তা জানতে চাওয়া হয়েছে। তাছাড়া ডাক্তারবাবুরা প্রতিটি নার্সিংহোমে কতটা সময় দেন, সেটাও উল্লেখ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু চিকিৎসক নয়, ওইসব নার্সিংহোম কর্তাদেরও নোটিস ধরানো হয়েছে। তাঁরা কীভাবে ওই চিকিৎসকদের থেকে পরিষেবা পাচ্ছেন, সেটা জানাতে হবে বলে দাবি করা হয়েছে।

এদিকে শোকজের (Showcause)সেই তালিকায় ময়নার প্রাক্তন বিধায়ক তথা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সংগ্রাম দোলুই থেকে শুরু করে তমলুক শহরের নামকরা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ কবীর আলি খান-সহ বহু নামী চিকিৎসক রয়েছেন। এই তালিকায় থাকা চিকিৎসক বিক্রমাদিত্য খাঁড়া আবার শহরের মোট ২৯টি নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত। ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট পোর্টাল থেকে এমনই তথ্য বের করে তাঁকে কড়া চিঠি ধরিয়েছে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর। এছাড়াও চিকিৎসক অর্ধেন্দুবিকাশ দাস ১৬টি, পুষ্পিতা দে, শুকদেব বর্মণ, নন্দিতা দাস ১৫টি করে এবং গোপীনাথ মাজি ১৪টি, জয়দেব বর্মণ ১২টি নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এভাবেই ৩টি বা তার বেশি নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত জেলার মোট ৯৩জন চিকিৎসককে শোকজ করা হয়েছে। ফলে ওই সকল চিকিৎসকরা খাতায়-কলমে যুক্ত থাকলেও ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট পোর্টাল থেকে ওই তথ্য দেখে চক্ষুচড়কগাছ জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের। যদিও এই শোকজের বিষয়টিকে আর জি কর (RG Kar Hospital) ইস্যুতে চিকিৎসকদের পথে নামার ‘প্রতিশোধ’ বলে দাবি করেছেন ডাক্তারবাবুদের একাংশ।

[আরও পডুন: কার্ড-ফোন অতীত, এবার ডিজিটাল লেনদেন হবে স্রেফ মুখ দেখিয়েই!]

আইএমএ-র (IMA) তমলুক শাখার সম্পাদক কল্যাণময় বসুর দাবি, ক্লিনিক্যাল এস্টব্লিশসমেন্ট অ্যাক্ট মেনেই এতদিন সবটা চলে এসেছে। ফলে নিয়ম ভাঙার এই সংস্কৃতি যদি হয়ে থাকে, সেটা প্রথম থেকেই সাবধান করা হলো না কেন? যদিও এই দাবি উড়িয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক বিভাস রায়। তিনি বলেন, ”আর জি করের ঘটনার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। স্বাস্থ্যসাথীর বিল থেকেই এই অনিয়মের বিষয়টি সামনে এসেছে। ফলে তথ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই শোকজ হয়েছে।” নার্সিংহোম অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক কানাইলাল দাসের কথায়, ”সমস্ত মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে গিয়ে এ ধরনের হয়তো সামান্য কিছু ত্রুটি থাকতে পারে। আগামী সময়ে সেগুলি যথারীতি সংশোধনের চেষ্টা করা হবে।”

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement