প্রতীকী ছবি।
সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: একপাল কেউটের (Snakes) সঙ্গে এতদিন ঘর করছিলেন! আর সেটা নিজেদের অজান্তেই! যখন জানতে পারলেন, আতঙ্কে শিউড়ে ওঠার জোগাড়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার (South 24 Paraganas) পাথরপ্রতিমা ব্লকের ঢোলাহাটের এক পরিবারে এই কাণ্ড। আচমকাই পরিত্যক্ত ড্রামের মধ্যে ২৭টি কেউটে কিলবিল করতে দেখে স্বভাবতই প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান সকলে। কিন্তু এত ভয় পেয়েও গৃহকর্তা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সাপগুলির প্রাণনাশ করতে মোটেই রাজি হননি। বনদপ্তরকে খবর দিয়ে তাঁদের মাধ্যমেই উদ্ধার করে সাপগুলিকে নিরাপদে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পাথরপ্রতিমা ব্লকের ঢোলাহাটের রথতলার বাসিন্দা প্রভাকর মণ্ডল। বাড়ির উঠোনে একটি পরিতক্ত ড্রামের ভিতর কেউটের দঙ্গল বেশ ভালোমতোই সংসার পেতে বসেছিল। সেটা জানতেনও না বাড়ির কেউ। প্রভাকর বাবুর ছেলে দীপঙ্কর মণ্ডল বাড়ির উঠোন পরিষ্কার করছিলেন। উঠোনে ঘাস জমে যাওয়ায় সেই ঘাস কেটে পরিষ্কার করছিলেন দীপঙ্কর। হঠাৎই কানে আসে ফোঁসফোঁস আওয়াজ। বহুদিন পড়ে থাকা একটি ড্রামের মধ্যে থেকে আসছিল ওই আওয়াজ। তা শুনেই তিনি ছুটে যান সেখানে। ড্রামের ভিতর মুখ বাড়িয়ে দেখেন, ভেতরে কিলবিল করছে একদল কেউটে সাপ! তবে বেশিরভাগই বাচ্চা। তার মধ্যে দু’টি কেউটে বিরাট আকারের।
গ্রামে খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই ভিড় জমে যায় মণ্ডল বাড়িতে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বাড়ির চারপাশে। গ্রামবাসীদের কেউ কেউ কেউটেগুলিকে মেরে ফেলার পরামর্শ দেন। পরিকল্পনা করেন তাঁরা। তবে অনেকেই তাতে মত দেননি। এতগুলো বাচ্চা-সহ কেউটেগুলি মারার বিপক্ষে ছিল মণ্ডল পরিবারও। ভাবনাচিন্তা করে তাঁরা খবর দেন বনদপ্তরে। তবে বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই গ্রামবাসীরাই কেউটে উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। কৌশল করে প্রথমে বড় কেউটে দু’টিকে একটি কলসির মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। কলসির মুখে শক্ত করে জাল দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। তারপর বাকি আরও ২৫ টি কেউটের বাচ্চাকে উদ্ধার করে আলাদা আলাদা কলসিতে ভরে ফেলেন তাঁরা।
শুক্রবার ঢোলাহাটের মণ্ডল বাড়িতে কেউটে ভর্তি কলসিগুলি নিয়ে যান বনদপ্তরের কর্মীরা। বনদপ্তর সূ্ত্রে খবর, লোকালয়ের বাইরে নিয়ে গিয়ে সুন্দরবনের ঘন কোনও জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে কেউটেগুলিকে। সাপগুলিকে না মেরে জীবন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে সেগুলিকে বনদপ্তরের হাতে তুলে দেওয়ায় মণ্ডল পরিবার এবং গ্রামের সচেতন মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বনদপ্তর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.