সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: ছোট্ট এক চিলতে ঘর। চারদিকে ছড়িয়ে সরা, রংয়ের বালতি, তুলি। মাটির সরায় ফুটে উঠছে লক্ষ্মী নারায়ণ, দুর্গা-সহ বিভিন্ন চিত্র। অশক্ত হাতে কাজে মন দিয়েছেন শিল্পী। এক চোখের সাহায্যে এঁকে চলেছেন তিনি। মাঝে মাঝে ঝাপসা হয়ে উঠছে চারপাশ। চোখ মুছে ফের কাজে মন দিচ্ছেন। নিপুণ দক্ষতায় তৈরি হচ্ছে একের পর এক লক্ষ্মীসরা। কিছু বাজারে গিয়েছে। বাকিগুলোও যাবে। বিক্রির টাকা পুরোটায় লাগবে সংসারে। এমনটাই ফুলিয়ার চিত্তরঞ্জন পালের সাম্প্রতিক রোজনামচা।
বছর সত্তরের চিত্তরঞ্জনের বাবা ও ঠাকুর্দাও এই শিল্পের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। সেই পথে হাঁটেন তিনিও। সংসারে স্বচ্ছলতা না থাকলেও মোটামুটি চলে যাচ্ছিল। কিন্তু এর পরই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। বছর দশেক আগে এক দুর্ঘটনায় এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি। অথচ পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী ও ছেলে। অগত্যা সংসারের জোয়াল কাঁধে একচোখেই চালিয়ে যান কাজ। যদিও একাজ সারা বছর থাকে না। সেই কারণেই একটি চায়ের দোকানও চালান সত্তরের বৃদ্ধ।
চিত্তরঞ্জন পাল বলছেন, “১৮ বছর বয়স থেকে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই শিল্প এখন শেষের দিকে। একটা চায়ের দোকান চালাই। ছেলেকে কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছি। ও কোনও চাকরি পায়নি। অভাবের সংসার।” এক চোখ হারানো নিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, “দুর্ঘটনায় একটা চোখ নষ্ট হয়ে যায়। ছবি আঁকতে একটু কষ্ট হয় বইকি। তবে চশমা ছাড়াই আঁকতে পারি। রাতেও অসুবিধা হয় না।” তাঁর অভিযোগ বৃদ্ধ ভাতার সুযোগ পান না তিনি।
কথাগুলো বলার পর গভীরতর শূন্য দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে দেখা গেল তাঁকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফের তুললেন তুলি। আবার মাটির সরায় আবার ফুটে উঠছে লক্ষ্মী, নারায়ণ। সময় নেই হাতে। যত বেশি সরা বাজারে পৌঁছবে ততই লাভ। সুতরাং ফের নিজের সৃষ্টিকাজেই ডুবে গেলেন চিত্তরঞ্জন পাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.