অর্ণব আইচ: বাম জমানাতেই শুরু হয় রেশন বণ্টন দুর্নীতি। ২০০৭ সাল থেকে হওয়া সেই দুর্নীতির তথ্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে দিল একটি সংগঠন। মঙ্গলবার সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সে ওই সংগঠনটির পক্ষ থেকে ইডি আধিকারিকদের হাতে নথি ও তথ্য তুলে ধরা হয়।
রেশন বণ্টন দুর্নীতির অন্যতম অভিযুক্ত বাকিবুর রহমানের উত্থান যে বাম আমলেই, সেই তথ্য রয়েছে ইডির কাছেও। নদিয়ার তিনটি অঞ্চলে দুর্নীতি হয়েছে, এই অভিযোগ তুলেই জেলা পুলিশের কাছে মামলা দায়ের হয়। তারই ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে ইডি। এবার ২০০৪ সাল থেকেই আরও অন্তত চারটি জেলা উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদহ ও মুর্শিদাবাদে রেশন সংক্রান্ত বিষয় ও রেশন কার্ড নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে বলে ইডির কাছে অভিযোগ জানানো হয় ও তথ্য তুলে ধরা হয়। এই অভিযোগ অনুযায়ী, রেশন ডিলাররা সপ্তাহে কত কুইন্টাল খাদ্য বা শস্য পেয়েছেন ও কত কুইন্টাল রেশন জনসাধারণের মধ্যে বণ্টন করেছেন, সেই খতিয়ান ফুড ইন্সপেক্টরকে জানাতে হয়।
কিন্তু ইডির কাছে আসা অভিযোগ অনুযায়ী, বাম আমলেই কুইন্টাল পিছু কয়েকজন ফুড ইন্সপেক্টর ৫০ টাকা করে নিতেন। তার ফলে ডিলারদের হিসাব দিতে হত না। রেশন কার্ডের গ্রাহকদের রেশন তোলার সময় একটি সরকারি মেমো বা রসিদ দেওয়া হয়। তাতে রেশন দ্রব্যের বিবরণ থাকে। কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে রেশন ডিলাররা সেই রসিদ না দিয়ে রেশন দিতেন। ইডির কাছে ওই সংগঠনের অভিযোগ, রেশন ডিলাররা গ্রাহকদের সঠিক মাপের দ্রব্য দিতেন না। এভাবেও বিপুল পরিমাণ টাকার তছরুপ করা হয়। ইডির কাছে জমা দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাম আমলে এক একজন রেশন ডিলার সপ্তাহে বড়জোর ১৫ কুইন্টাল সামগ্রী পেতেন। সেইমতো তাঁরা কেউ মাসিক ৫ হাজার টাকা ও বার্ষিক ৬০ হাজার টাকার বেশি পেতেন না। কিন্তু তখন থেকেই রেশন ডিলাররা বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হন বলে অভিযোগ তোলা হয়।
ইডিকে আরও জানানো হয়েছে, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে বাম আমলেই ৪২ সপ্তাহ ধরে গ্রাহকদের রেশন দেওয়া হয়নি। তা নিয়ে রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন সাধারণ মানুষ। যে সংগঠনটি ইডির কাছে অভিযোগ জানিয়েছে, তার পক্ষে প্রসেনজিৎ মণ্ডল সিজিও কমপ্লেক্সে দাঁড়িয়ে জানান, তাঁরা প্রায় ১০০ জন রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন রাজ্যের বিভিন্ন থানায়। তাঁরা বাম আমলে পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানান। খাদ্য দপ্তরেকেও বারবার জানানো হয়। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। শেষে তাঁরা হাই কোর্টের শরণাপন্ন হন। সিআইডিও এর তদন্ত করে। পরে তাঁরা দিল্লিতেও ইডির কাছে তথ্য দেন। এবার এই তথ্যগুলো জানানোর পর ইডি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে তাঁরা আশাবাদী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.