সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: ঠিক লোকসভা নির্বাচনের দামামা যখন বেজে উঠেছে, পার্টির নেতাদের প্রস্তুতিও তুঙ্গে, তখনই বাগনানের বিধায়ক অরুনাভ সেন-সহ প্রথম শ্রেণির আরও এক তৃণমূল নেতা শ্রীকান্ত সরকার ওরফে ‘মানি’কে ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল দুই বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এরকমটাই দাবি করা হয়েছে। দিনকয়েক আগে থেকেই এলাকার কিছু যুবক প্রকাশ্যে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশে খুনের হুমকি দিতে থাকে বলে জানান শ্রীকান্তবাবু। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে চার বহিরাগত যুবক। বাগনান থানার চাকুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে এই চারজন সশস্ত্র যুবককে গ্রেপ্তার করেছে হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের একটি অপারেশন স্কোয়াড গ্রুপ। একই সঙ্গে ডালিম চক্রবর্তী নামেরও এক যুবককে বাগনান থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই ব্যক্তি এই ঘটনার লিংকম্যান ছিল বলে জানা গিয়েছে সূত্রের খবরে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ। বাগনানে বড়সড় নাশকতা ঘটানোর লক্ষ্য নিয়েই এলাকার একটি বাড়িতে সন্দেহভাজন ওই চার যুবক আত্মগোপন করে ছিল বলে সূত্রের খবর। অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন ঝাড়খণ্ড ও দু’জন খড়গপুরের বাসিন্দা। গোপন সূত্রে খবর পেয়েই পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে তাদের।
বাগনান-২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শ্রীকান্ত সরকারের অভিযোগ, তাঁকে খুন করার উদ্দেশ্য নিয়ে স্থানীয় দুই বিজেপি নেতার সাহচর্যে ডালিম চক্রবর্তীর মাধ্যমে বহিরাগত ওই চার যুবককে বাগনানে আনা হয়েছিল। বাগনানের বিধায়ক অরুনাভ সেনকে খুনের ছক কষে বলে জানান তিনি। বুধবারই তাঁকে হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের তরফ থেকে এই বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল বলে তিনি জানিয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় সাবসিট অঞ্চলের সভাপতি শ্রীকান্ত সেন জানান, ধৃতেরা যে বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছিল সেই বাড়ির মালিক ব্যবসা সূত্রে হাওড়ায় থাকেন। মাঝে মাঝেই বাড়ির মালিক বহিরাগতদের নিয়ে ওই বাড়িতে এসে ওঠেন। গত তিনদিন আগে ওই এলাকায় একটি কালীপুজো হয়। তারপর থেকেই এলাকার কিছু যুবক তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে খুনের হুমকি দিতে থাকে বলে শ্রীকান্তবাবু জানান। তিনি বলেন, গত কয়েক দিন যাবৎ ওই যুবকদের শরীরী ভাষায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছিল। বুধবার সকাল থেকে চার বহিরাগত যুবক এসে স্থানীয় ওই বাড়িটিতে আশ্রয় নেয় বলেও দাবি করেন তিনি।
[তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে টুইট যুদ্ধ বাবুলের, ভোটের আবহে সরগরম আসানসোল]
যদিও এই অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে বিজেপি। বিজেপির হাওড়া গ্রামীণ জেলা সভাপতি অনুপম মল্লিক বলেন, “সন্ত্রাসের রাজনীতি কারা করে তা গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেই মানুষ দেখে নিয়েছে।” পুলিশ অবশ্য এই পুরো ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে আপাতত নারাজ। সন্দেহজনক আচরণের জন্য চার বহিরাগতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আপাতত ওই বাড়ির মালিকের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। ধৃত চার যুবককে শুক্রবার আদালতে পেশ করে পুলিশ তাদের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আবেদন জানাবে। তারপরেই এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হবে। তবে বড়সড় নাশকতা চালানোর জন্যই যে ধৃত ব্যক্তিদের ভাড়া করে আনা হয়েছিল, সে বিষয়ে প্রায় সকলেই একমত। তবে কারা কী উদ্দেশ্য নিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে পুলিশি তদন্ত শুরু হলে তার সবটাই জানা যাবে বলে মনে করছেন বাগনানবাসী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.