শেখর চন্দ্র, আসানসোল: আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া এলাকা আসানসোলের (Asansol) পলাশডিহা ও সরাগডিহি। এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ দিনমজুর। করোনা (Coronavirus) আবহে তাঁরা এখন কাজ হারা। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের একমাত্র সম্বল ছিল সরকারি হাসপাতাল। যা এখন রোগীতে পরিপূর্ণ। ওদের নেই স্মার্টফোন বা অ্যাম্বুলেন্স। তাই বেশিরভাগ রোগীকে ঘরেই রাখতে হচ্ছে। এই এলাকার মানুষদের জন্য দুয়ারে চিকিৎসা নিয়ে এলেন ‘ফুডম্যান’ চন্দ্রশেখর কুণ্ডু।
রাজ্যে খাদ্য আন্দোলনের অন্যতম মুখ চন্দ্রশেখর বাবু। এর আগে দুঃস্থদের জন্য তিনি দৈনিক খাবারের জন্য খাদ্য ব্যাংক তৈরি করেছেন। লকডাউনে গরীবদের জন্য করেছেন পড়াশুনার ব্যবস্থা। আমফানে দিনের দিনের পর দিন তিনি রিলিফ নিয়ে পড়েছিলেন সুন্দরবনে। এবার তিনি ও তাঁর বন্ধুরা আসানসোলের প্রত্যন্ত এলাকায় নিয়ে এলেন দুয়ারে অক্সিজেন (Oxygen) প্রকল্প। মেডিক্যাল টিম ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে বাড়িকেই কার্যত আইসোলোশন সেন্টারের রূপ দিলেন। পলাশডিহা ও সরাগডিহা গ্রামে ব্যবস্থা করলেন আপৎকালীন চিকিৎসার। দুটি করে গ্রামকে একসঙ্গে এনে বিনামূল্যে একটি করে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করলেন তাঁরা। প্রতিটি পরিবারে করোনা মেডিক্যাল কিট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার কীভাবে অপরেট করতে হয় তার ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা করা হল গ্রামে। পাশাপাশি ইসিএলের মেডিক্যাল টিমের সাহায্য নিয়ে গ্রামে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
কীভাবে শুরু হল অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের কাজ ? ফুডম্যান চন্দ্রশেখর কুণ্ডু বলেন, ”দিল্লিতে অক্সিজেনের অভাবের খবর শুনে পশ্চিম বর্ধমানে অক্সিজেন প্লান্ট ও সাপ্লায়রদের খোঁজে নেমে পড়ি। পানাগড় ওয়ারিয়া রানিগঞ্জের অক্সিজেন প্লান্ট গুলোর সন্ধান পাওয়া যায়। তারপরেই ফেসবুকে আমার মোবাইল নম্বর পোস্ট করি। চেষ্টা শুরু হয় অক্সিজেন যেখানে পাওয়া যায় তাদের সঙ্গে, যাদের দরকার তাদের যোগাযোগের। রোজ ছ’শোর উপর ফোন কল আসতে থাকে।”
রোগীদের প্রেসক্রিপশন দেখে এবং কথা বলে উপযুক্ত লোককেই সাপ্লায়ারের ফোন নম্বর দেওয়া শুরু হয়। ইসিএলের সালানপুর এরিয়া মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার শম্পা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ”এখন প্রতিটি জ্বর বা অসুখ হলে আমরা ধরেই নিচ্ছি করোনা। তারজন্য নির্দিষ্ট ওষুধ রয়েছে। সেই ওষুধের কিট তৈরি করে আমরা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। পাশাপাশি অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করেছেন চন্দ্রশেখরবাবু। আমরা সেই সিলিন্ডার কীভাবে চালাতে হবে, তা হাতেকলমে শিখিয়ে রাখলাম। যাতে আপৎকালীন অবস্থায় মূর্মূর্ষ রোগীকে বাঁচানো যায়। খবর পাওয়ার পর চন্দ্রশেখর কুণ্ডু, তারঁ সংস্থা ফিড ও আমার ততক্ষণে গ্রামে পৌঁছে যাব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.