ছবিতে বন্দ্যোপাধ্যায়দের স্বর্ণলক্ষ্মী, ছবি : মৈনাক মুখোপাধ্যায়।
চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: সোনায় মোড়া অষ্টধাতুর তৈরি মা লক্ষ্মীর মূর্তি। সারা বছর থাকেন সিন্দুকে। অপরূপ কারুকার্য। টানাটানা চোখ থেকে টিকলো নাক, গায়ে দামি শাড়ি আর স্বর্ণালংকার। নামেই অষ্টধাতু, বেশিরভাগটাই সোনায় মোড়া। একসময়ের কয়লা খনির মালিকানাধীন জামুড়িয়ার বন্দ্যোপাধ্যায়রা রত্নখচিত মা লক্ষ্মীকে গড়িয়েছিলেন। সেই জমিদারি আজ আর নেই। কর্মসূত্রে পরিবারের অনেকেই দেশের বাইরে থাকেন। কিন্তু প্রাচীন জমিদারবাড়ি ও যকের ধন আগলে রেখেছেন অষ্টধাতুর মা লক্ষ্মী। যিনি সারা বছর থাকেন সিন্দুকে। কিন্তু একটি রাতে বেরিয়ে আসেন বাইরে।
কোজাগরীর রাতে পুলিশি প্রহরায় বাড়ির সিন্দুক থেকে বের করে মা লক্ষ্মীকে নিয়ে যাওয়া হয় মন্দিরে। অষ্টধাতু হলেও প্রায় ৮০ শতাংশ সোনা দিয়ে তৈরি দু’ফুট লম্বা লক্ষ্মী মূর্তি দেখতে ঢল নামে জামুড়িয়ার নন্ডি গ্রামে। একসময় কয়লাখনির মালিক ছিলেন নন্ডির বন্দ্যোপাধ্যায়রা। তাঁদের পারিবারিক পুজোটি দেখতে বাইরের মানুষও ভিড় জমান জামুড়িয়ায়। ৭০ বছর আগে পরিবারের গৃহকর্ত্রী মা লক্ষ্মীর রূপ স্বপ্নে দেখেছিলেন। সেই মূর্তি গড়েই তখন থেকেই কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর প্রচলন শুরু বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে।
পরিবারের বর্তমান গৃহবধূ অনিতাদেবী জানান, যখন পুজো চালু হয় তখন ১৪টি কয়লাখনির মালিক ছিলেন নন্ডির বন্দ্যোপাধ্যায়রা। প্রায় এক হাজার খনিশ্রমিক ওই পুজোয় শামিল হতেন। সাতদিন ধরে চলত উৎসব। গ্রামবাসী গোরাচাঁদ গড়াই জানান, লক্ষ্মী মূর্তিটি খুব ভারী। তুলতে দু’জনের সাহায্য নিতে হয়। ব্যাপক নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে সিন্দুক থেকে বের করে আনা হয় একরাতের জন্য। মা লক্ষ্মীকে নতুন শাড়ি আর স্বর্ণালংকারে সাজিয়ে পুজো করা হয়। পুরনো জৌলুস আর নেই। কিন্তু পুজো-আর্চা, রীতি- রেওয়াজ অব্যাহত। দেশে ও দেশের বাইরে থাকা পরিবারের সদস্যরা লক্ষ্মীপুজোর জন্য জামুড়িয়ায় আসেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.