চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: স্পিড ব্রেকার থেকে তৈরি হবে বিদ্যুৎ শক্তির উৎপাদন। অভিনব ভাবনার মডেল তৈরি করেছেন আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়ারা। নেতৃত্বে কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম ভট্টাচার্য ও অধ্যাপক তন্ময় ঘোষ।
প্রতিনিয়ত নষ্ট শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হবে বিদ্যুৎ শক্তি। দেশের রাস্তা-ঘাটে যেসব স্পিড ব্রেকার দেখা যায় তাদের উচ্চতা কমবেশি ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার। একটা প্রাইভেট গাড়ির ওজন কমবেশি প্রায় ১৮০০ কেজি। অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম ভট্টাচার্য বলেন, বিশাল ওজনের গাড়িটি যখন স্পিড ব্রেকারের উপর দিয়ে যায়, তখন কিন্তু সেটি বেশ ভালরকমের বিভব শক্তির উৎস হয়ে যায়। অধ্যক্ষের কথায়, “উৎপন্ন বিদ্যুৎ বিকল্প শক্তি হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে প্লাস্টিকের স্পিড ব্রেকারগুলিকে। স্পিড ব্রেকারের সঙ্গে সংযোগ থাকবে ডায়নামো যুক্ত একটি যন্ত্র। গাড়ির চাকার অভিঘাতে যে কম্পন তৈরি হবে, তা থেকে বিদ্যুৎ তৈরি হবে ওই যন্ত্রে। এই বিদ্যুতে জ্বলতে পারে আলো।”
পড়ুয়ারা জানান, সারাদিন শহরের ব্যস্ত রাস্তাতে প্রতি ঘণ্টায় যে পরিমাণে গাড়ি চলাচল করে তাতে বহু শক্তি নষ্ট হয়। এই নষ্ট শক্তিটা কাজে লাগিয়েই তৈরি হবে বিদ্যুৎ শক্তি। এক্ষেত্রে মেকানিক্যাল এনার্জি রূপান্তরিত হবে ইলেকট্রিক্যাল এনার্জিতে। ঠিক কীভাবে কাজ করবে এই যন্ত্র? অধ্যক্ষ বলেন, গাড়ির চাকা স্পিড ব্রেকারের উপর দিয়ে গেলে কম্পন তৈরি হয়। রাস্তার ধারে রাখা থাকবে কপিকল ও চেনের সঙ্গে লাগানো ডায়নামো। এই যন্ত্রের সঙ্গে সংযোগ থাকবে স্পিড ব্রেকারের। কম্পনের ফলে কপিকল ও চেনের সাহায্যে ডায়নামো ঘুরবে। তাতেই তৈরি হবে বিদ্যুৎ। ডায়নামো ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক পুরনো কৌশল। তাকে রাস্তার ধারে বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ভাবনা এককথায় অভিনব।
ওই কলেজের আরেক শিক্ষক তথা ফুডম্যান চন্দ্রশেখর কুণ্ডু বলেন, “তেল, গ্যাসের মজুত যখন শেষের দিকে তখন ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিদ্যুতের নতুন নতুন উৎস খুঁজতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে ভবিষ্যত প্রজন্মকে। সোলার, বায়োগ্যাস-সহ কত নতুন নতুন পদ্ধতির কথাই চিন্তা করা হচ্ছে। কলেজের পড়ুয়াদের এই উদ্ভাবনের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু সেটাই।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের আশেপাশেই কত শক্তির উৎস আছে। কেউ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে না। আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে।” কলেজের ওই গবেষকদের দাবি, তৈরি হওয়া বিদ্যুৎ সঞ্চিত রাখা হবে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে। এই ধরনের ব্যাটারি মোবাইলে ব্যবহার করা হয়। এর সঙ্গে টাইমার জুড়ে দিলে এই বিদ্যুতে জ্বলতে পারে রাস্তার আলো। চিরাচরিত উৎসের সাহায্যে উৎপন্ন বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে বলে দাবি গবেষক দলের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.