চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: ‘হ্যালো স্যার, শুনুন একটু জল দেবেন’ ? ‘আমার খিদে পেলে তোমার কোন নম্বরে জানাবো?’ ‘আজ বিকেলে দেখা করে যেও একবার’। আসানসোলের পথচলতি মানুষ একবার হলেও থেমে যাচ্ছেন এই শব্দবাণে। শহরের রাস্তার ধারে এই ধরণের কথা লেখা রয়েছে ছোট ছোট ব্যানারে। কোনও হোম ডেলিভারি কোম্পানীর বিজ্ঞাপনী চমক নয়, এই কথাগুলি আসানসোলের চারা গাছেদের মনের কথা। যাঁদের সদ্য রোপণ করে গেছেন একদল কচিকাঁচা। সুন্দর বেড়া তৈরি করে রং দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছেন তাঁরা। কিন্তু গাছগুলি বেড়ে উঠতে পারে শহরবাসীর আন্তরিক প্রচেষ্টায়। দিনে একবার বা দু’বার একটু জল দিতে হবে গাছগুলিকে। এই বার্তা দিয়েই সবুজ বিপ্লব শুরু হয়েছে কয়লা ময়লার শহরে।
ফেসবুক গ্রুপের নাম “আসানসোল”। সদস্য সংখ্যা প্রায় দুই লক্ষ। এই সদস্যরা বার্তা দিতে চেয়েছেন প্রাণের সঙ্গে গাছেদের মধ্যে রয়েছে অনুভূতিও। পথচলতি মানুষের সঙ্গে তাদের অনেক কথা রয়েছে। সেই কথাই তুলে ধরেছে ফেসবুকের বন্ধুরা। গ্যাঁটের টাকা খরচ করে উদ্যোগ নিয়ে শহরের রাস্তার ধারে তাঁরা গাছ লাগিয়ে বেড়াচ্ছেন। গরু ছাগলে যেন খেয়ে না নেয় তার জন্য বেড়া তৈরি করেছেন। সুন্দর করে রং করেছেন। এরপর? লাগবে জল। সেই জল দিতে হবে শহরবাসীকেই।
গ্রুপের অ্যাডমিন দেবাদৃতা ঘোষ বলেন, “প্রতি বছর গরম বাড়ছে আসানসোলে। বোঝাই যাচ্ছে শহরের পরিবেশকে ঠান্ডা রাখতে প্রয়োজন প্রচুর গাছ। তাই আমরা গাছ লাগাবার উদ্যোগ নিয়েছি।” গ্রুপের সদস্য পিয়ালি, প্রিয়রঞ্জন, সুমিতা, প্রশান্ত, মৌমিতাদের দাবি এই বর্ষায় অন্তত দশ হাজার গাছ লাগাবার লক্ষ্য রয়েছে। প্রথম দিকে নিজের নিজের বাড়িতে একটি করে গাছ লাগিয়ে সেলফি কনটেস্ট হয়েছিল। কিন্তু তাতে খুব বেশি সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই এবার তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন। সবুজ বিপ্লবীদের দাবি আসানসোল নামটি হয়েছে আসান গাছ থেকে। অথচ শহরে আসান গাছের দেখা মেলে না। নিউক্লীয় আবর্জনা, কলকারখানার দূষিত গ্যাস, যানবাহনের জ্বালানি পোড়া গন্ধ বাতাসে মিশে বাতাস দূষিত হচ্ছে শিল্পশহর। জেলার মোট আয়তনের তুলনায় গাছ থাকা উচিত ৩৩ শতাংশ। এখানে আছে মাত্র ০.৯ শতাংশ। প্রতিজোন হিসাবে যেখানে ৯ হাজার গাছ থাকা দরকার সেখানে এই শহরে রয়েছে মাত্র ২৮ টি গাছ। তাই আর বিলম্ব না করে আমরাই নেমেছি রাস্তায়।
শুধু ফেসবুক বন্ধুরাই নয়, আসানসোলে মহিলা উদ্যোগে সবুজায়নের লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ করা হয় রবিবার। মন্ত্রী মলয় ঘটকে স্ত্রী সুদেষ্ণা ঘটক উদ্যোগ নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে গাছ লাগান এদিন। আসানসোল জেলা হাসপাতালে পরিবেশ রক্ষার্থে বৃক্ষরোপণ করা হয়। গ্রীণ হেভন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে আসানসোল জেলা হাসপাতালে গাছ লাগান নার্স চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা। আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি গত তিন বছর ধরে গ্রীণ আসানসোল ক্লিন আসানসোল প্রকল্প নিয়েছেন পুরনিগম থেকে।
আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় পেয়েছেন কেন্দ্রের বন ও পরিবেশ দফতরের প্রতিমন্ত্রকের দায়িত্ব। এই অবস্থায় শহর আসানসোলের পরিবেশ দূষণমুক্ত হবে আশা রাখছেন শহরবাসী। কিন্তু ঘরে বসে নেই এই প্রজন্মও তাঁরা অন্য এক সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছেন। মাঠে নেমেছেন কারোর সাহায্য ছাড়াই। গাছ শুধু জলই চাইছে না, আশ্বাসও দিচ্ছে “একদিন এসো আড্ডা দেবো, এনো শুধু জল।”
ছবি : মৈনাক মুখোপাধ্যায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.