কিন্তু কীভাবে এল এত এত মাছ?
চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: আলু কিনতে গিয়ে আলু বোখরা মিললে অবাক হন নিশ্চই ? তেমনই কয়লা খাদানে যদি মাছ ওঠে? কি করবেন তখন? ভাবছেন গাঁজাখুরি গপ্প। আদতে কিন্তু তা নয়। একেবারে হাতে গরম সত্যি খবর। বিটুমিনাস, কার্বনের বদলে খনি থেকে উঠে এল কিলো কিলো রুই, কাতলা, বোয়াল, চিংড়ি। কয়াল খনিতে এত মাছ দেখে দৃশ্যতই অবাক খনি মালিকও। চমকে দেওয়া ঘটনাটি ঘটেছে রানিগঞ্জে ইসিএলের আমকলা কোলিয়ারিতে।
এদিকে কয়লা তুলতে গিয়ে মাছ ওঠায় আনন্দে আত্মহারা খনি শ্রমিকরা। গাঁইতি, ঝুড়ি ফেলে তাঁরাও গামছা-বঁড়শি নিয়ে মাছ ধরতে নেমেছেন। এক কথায় হইহই কাণ্ড ঘটেছে সংশ্লিষ্ট কোলিয়ারিতে। একটা দিন কয়লা ছেড়ে মাছ উত্তোলন করেই জমে উঠল ভুরিভোজ। ছোট-বড় খনি কর্তা, সেই সঙ্গে প্রায় ৭০ জন খনি শ্রমিক একটি করে মাছ নিয়ে গেলেন বাড়িতে। একলপ্তে প্রায় ৬০ কিলো মাছ পাওয়া গেল এই কোলিয়ারি থেকে। জানা গিয়েছে, আমকলা কোলিয়ারিটি ইসিএলের সাতগ্রাম এলাকার অন্তর্ভুক্ত। খোলামুখ খনিটির কয়লা উত্তোলন দায়িত্ব পেয়েছে বেসরকারি সংস্থা। অনেক সময় পুরনো কয়লা খনির জমা জলে মাছ চাষ হয়। সেই অর্থে এই খনিটি পুরোনো নয়। তাই এই খনি থেকে একটি একটি আড়াই তিন কিলো ওজনের মাছ ওঠায় সবাই অবাক।
কয়েকদিন আগে কোল ইন্ডিয়াকে খাদানের গভীর জল আবাদ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্ধ হয়ে যাওয়া খনির জমা জলে মাছ চাষ করে তার পতিত-দশা মোচন করাই মূল উদ্দেশ্য। রাজ্যে কোল ইন্ডিয়ার প্রায় ৭৮টি পরিত্যক্ত কয়লা খাদান রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর আশা, এই প্রকল্পে দু’টি লক্ষ্য পূরণ হবে। এক, কয়লা খাদানের জলে মাছ চাষ করা গেলে রুটি রুজির নয়া সংস্থান হবে। দুই, রসনা তৃপ্তির ব্যবস্থা হবে খাদ্য রসিকদের। রাজ্যে মাছ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হলেও তাতে চাহিদা মেটে না। খাদানে মাছ চাষ হলে সেই ঘাটতির কিছুটা পূরণ করা যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব যে অমূলক নয় তার প্রমাণ পাওয়া গেল আমকলা কোলিয়ারির ঘটনায়। আসানসোল-রানিগঞ্জ কয়লা খনি অঞ্চলের সালানপুর ব্লকের ১২টি পরিত্যক্ত খাদান রয়েছে। সেখানেই মৎস্য চাষ প্রকল্পের শুরু হওয়ার কথা। গত বছরে রাজ্যে প্রায় ১৬ লক্ষ ৭১ হাজার টন মাছ চাষ হয়েছে। কিন্তু চাহিদা ছিল প্রায় ১৮ লক্ষ টন। ঘাটতি মেটাতে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু থেকে বিশেষ করে বড় রুই ও কাতলা আমদানি করতে হয়। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী অনেক দিন ধরেই পরিত্যক্ত খাদানগুলিকে কাজে লাগানোর কথা বলছিলেন কেন্দ্রকে। প্রথম পর্বে ১২টি খাদানে পুরোদমে মাছ চাষ শুরু হলে প্রতি হেক্টরে ২০০০-৩০০০ কিলোগ্রাম মাছ পাওয়ার কথা।
তবে চালু খাদানেই বৃহস্পতিবার বিপুল পরিমাণ মাছ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু কীভাবে এল এত এত মাছ? ওই খনির সার্ভেয়ার নয়ন চট্টোপাধ্যায় জানান, গত বর্ষায় দামোদর ও নুনী নদীর জল উপচে ঢুকে পড়েছিল খনিতে। তখন খনির উৎপাদন ব্যাহত হয়েছিল। চারমাস পাম্প দিয়ে জল টেনে কয়লা উত্তোলন করতে গিয়ে মাছের বাজার বেরিয়ে আসে খনিতে। শুধু রুই, কাতলা নয়, মিরিক, চুনোমাছও পাওয়া গিয়েছে। স্থানীয় মাছচাষী মৃত্যুঞ্জয় ধীবর জানান, সাধারণ পুকুরের থেকে খনির জমা জলে মাছের বাড় বেশি হয়। কারণ খনির জল অনেক গভীর হয়। মাছেরা খেলা করতে পারে। দ্বিতীয়ত, খনির জল স্থির নয় পুকুরের মতো। কারণ ব্লাস্টিং এর জন্য খনির জলে সবসময় কম্পন থাকে। মূলত এই দুটি কারণে খনির জলে মাছ চাষ উপযুক্ত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.