চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: মহানিষ্ক্রমণের পথে নেতাজি আসানসোল হয়েই বিহারে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে এই শহরের আরও একটা যোগ ছিল, তা বোধহয় অনেকেরই অজানা। সম্প্রতি সুভাষচন্দ্র বসুর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাওয়া গিয়েছে সীতারামপুর বেলরুইয়ের জমিদার রায় পরিবারের সূত্রে। যেখানে উল্লেখ রয়েছে সুভাষচন্দ্র রায়বাড়িতে এসেছিলেন। চিঠির মধ্যেই উল্লেখ রয়েছে সেই কথা।
[মর্যাদা পাননি নেতাজি, জাতীয় ছুটি চেয়ে ফের সরব মমতা]
ছোট্ট ৪/৬ ইঞ্চি সাইজের একটি কাগজে ইংরেজিতে টাইপ করা চিঠি। চিঠির উপরে ডানদিকে লেখা ‘৩৮/২ এলগিন রোড, ক্যালকাটা’। চিঠির নিচে কালো কালিতে হস্তাক্ষর সুভাষচন্দ্রের। চিঠিটি লেখা হয়েছে ১৯৪০ সালের ১৬ জুন। চিঠিটির প্রাপক হিসেবে নাম রয়েছে ‘মি: রায়’কে। সীতারমপুরের জমিদার, রায়সাহেব নকুলচন্দ্র রায়ই সেই ব্যক্তি। চিঠিতে সুভাষচন্দ্র লিখেছেন, সোনার বাংলা কটন মিলে বোর্ড অফ ডিরেক্টরস-এর সদস্য হিসাবে তিনি নিযুক্ত হয়েছেন। সিআর দাসও রয়েছেন সেই বোর্ডে। উৎপাদন খুব শীঘ্রই চালু হয়ে বাজারে আসবে। রায়সাহেবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সোনার বাংলা কটন মিল লিমিটেডের বোর্ড অফ ডিরেক্টরস-এর সদস্য হতে।
বিশাল জমিদার বাড়ি সংস্কার করতে গিয়ে চিঠিটি পাওয়া যায় বছর পাঁচেক আগে। চিঠিটি যখন রায়বাড়িতে পাওয়া যায়, তখন প্রয়াত রায়সাহেব নকুলচন্দ্র রায়ের ভাইপো বাদল রায় বেঁচে ছিলেন। ১৯৪০ সালে বাদলবাবুর বয়স ছিল ১০ বছর। রায় পরিবারের মধ্যে তিনিই ছিলেন সেই ঘটনার শেষ সাক্ষী। মারা যাওয়ার আগে স্মৃতি হাতড়ে বর্তমান প্রজন্মকে বলে যান সেই কথা। তাঁর কথার সূত্র ধরেই বাদলবাবুর ছেলে তথা রায়সাহেব নকুলবাবুর নাতি অসিতকুমার রায় দাবি করেন তাঁদের বাড়িতে ২০ জুন নেতাজি এসেছিলেন। তিনি আসার এক ঘন্টা আগে সেই চিঠি দিয়ে গিয়েছিলেন কোনও পত্রবাহক। অসিত রায় বলেন, বাবার (বাদল রায়) কাছে শুনেছেন তিনি নেতাজিকে দেখেছিলেন। অস্টিন গাড়িতে রায়বাড়িতে এসেছিলেন। এমনকী তাঁদের বাড়ির নিচতলায় কাঠের চেয়ারে বসেছিলেন নেতাজি। সুভাষচন্দ্রের বসা সেই চেয়ারটি আজও একই ভাবে রাখা রয়েছে রায়দের জমিদারবাড়িতে। ব্যবসা-সংক্রান্ত কোনও মিটিং হয় সুভাষচন্দ্র বসু ও নকুলবাবুর মধ্যে।
[নেতাজি ফিরে আসবেন, আজও বিশ্বাস করে কাটোয়ার এই আশ্রম]
তবে এই চিঠির ব্যাপারে প্রচারমাধ্যমকে এড়িয়েই চলে রায় পরিবার। তাঁদের দাবি, সম্পূর্ণ পারিবারিক একটা ব্যাপার, যা নিয়ে তাঁরা বিশেষ হই হুল্লোড় করতে আগ্রহী নন। ওই বাড়িতে সুভাষ বসুর আসার সোনালি স্মৃতিকে তাঁরা আঁকড়ে ধরে রাখতে চান এখনও। এই চিঠি নিয়ে অনেক নেতাজি গবেষকরা উৎসাহী হলেও চিঠি হাতে সরাসরি পাননি তাঁরা। কিন্তু চিঠির ভিডিও ক্লিপ ও ছবি দেখে তাঁদের প্রাথমিক ধারণা ওই হস্তাক্ষর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুরই। মিশন নেতাজির সক্রিয় সদস্য আসানসোলের অমৃতানন্দ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, চিঠিতে যে হস্তাক্ষর রয়েছে তা সুভাষ বসুর। তিনি মনে করেন বিপ্লব সংগঠিত করতে যে অর্থের প্রয়োজন পড়ত তা জোগানের জন্যই হয়তো এই ব্যবসার প্রয়োজন পড়েছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.