Advertisement
Advertisement

সন্তানরা বিদেশে, একাকী বৃদ্ধ-বৃদ্ধার পাশে এবার ‘নমন’

বয়স্কদের সুরক্ষায় এগিয়ে এল আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট।

Asansol-Durgapur police commissionerate inaugurate special service for elderly people

ছবি : মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়

Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:September 2, 2018 7:51 pm
  • Updated:September 2, 2018 9:22 pm  

চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোলসুশিক্ষিত ছেলেমেয়ে কেরিয়ারের টানে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। এনআরআই জামাই মেয়েকে নিয়ে টেক্সাসে। অবসর নেওয়ার পর থেকে একাএকাই দিন কাটে রায় দম্পতির। দশ বছর কেটেছে, বয়সের সঙ্গেসঙ্গে সমস্যা বেড়েছে। শরীর অশক্ত হলেও চালাতে হচ্ছে। বাইরের মানুষের ভরসায় আর কতটুকুই বা রাখা যায়। কে জানে কবে পরিচারক সেজে ঢুকে ডাকাতি করে পালায়। প্রাণটাও যেতে পারে। এবার সেই অসহায় দম্পতির পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এল আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। পুলিশ কমিশনারেটের সাত বছরের পূর্তিতে তৈরি হল জেলার বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সহায়ক ‘নমন’। বয়স্ক নাগরিকদের পাশে দাঁড়াতে কমিশনারেটের নয়া উদ্যোগ এই ‘নমন’।

কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ‘নমন’ই বাঁচাবে বয়স্কদের। তা ডাকাতের হাত থেকে বাঁচতেই হোক বা অসুস্থতায় পাশে দাঁড়াতে হোক। পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মীনা এই প্রকল্পের শুভ সূচনা করে তারপর এলাকার বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সদস্যপত্র। এখনও পর্যন্ত চারজন, তবে দিনে দিনে সদস্যের সংখ্যা বেড়ে হাজার ছাড়াক, এমনটাই চাইছে ‘নমন’।

Advertisement

[ভাঙড়ে তৃণমূল কর্মীর রহস্যমৃত্যু, খুন বলে অভিযোগ পরিবারের]

বয়স্ক নাগরিকদের সহায়তায় কী কী করতে পারে ‘নমন’?

সংস্থার সদস্যরা বিপদে পড়লেও ‘নমন’ ছুটে যাবে সে বাড়িতে। ‘নমন’-এর হয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাবেন কোনও পুলিশ কর্তা। প্রয়োজনে পুলিশকর্মীদের একটি দল। অশক্ত শরীরে বাড়ির বাইরে না বেরিয়েও আনাজপাতির বাজার পৌঁছে যাবে সদস্যের বাড়িতে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সব থেকে বড় সমস্যা অসুস্থতা। আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্ধের যষ্ঠির মতো ‘নমন’ এগিয়ে আসবে সেই অসহায় দম্পতির পাশে। বাড়িতে বসে মিলবে জীবনদায়ী ওষুধ। সদস্যপত্রে থাকা ফোন নম্বরে শুধু একটা কল, তাহলেই হাজির সহায়তা। বলা বাহুল্য, খুব শিগগির ‘নমন’ অ্যাপ আনতে চলেছে দুর্গাপুর-আসানসোল পুলিশ কমিনারেট। তখন স্মার্ট ফোনের গুগল প্লে-স্টোর থেকে শুধু অ্যাপটিকে ডাউনলোড করে নিন। তারপর আবেদন করলেই মিলবে সদস্যপদ। তখন সহায়তা আরও বেশি সহজ হয়ে যাবে। তাই যেকোনও সহায়তাতে ‘নমন’-কে ডাকতে ইতিমধ্যে সদস্যপদ নিয়েছেন আসানসোলের মদনমোহন দাস, এনএস রোডের বচ্চন ঝা, রানিগঞ্জের কমলা লায়েক ও মুন্সি বাজারের সরোজ খাতুন। এঁরা সকলেই ষাটের কোঠা পেরিয়ে এসেছেন। অশক্ত মানুষগুলি বাড়িতে একাএকাই প্রহর কাটান। দেখার কেউ নেই। কারোর ছেলে বাইরে চাকরি করেন কারও বা মেয়ের বিয়ের পর একা পড়ে গিয়েছেন।যখের ধন আগলে পড়ে আছেন। অসহায় এসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরই এবার সুরক্ষার দায়িত্ব নিল পুলিশ।

উল্লেখ্য, সময়ের সঙ্গেসঙ্গে বদল যাচ্ছে অপরাধের ধরনধারণ। এখনও বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাই দুষ্কৃতীদের ‘সফট টার্গেট’ হয়ে উঠছেন। কেউ বা একটা সময় ছিলেন পদস্থ সরকারি কর্তা, কেউ বা নামী ব্যবসায়ী। সময়ের সঙ্গেসঙ্গে বার্ধক্য এসেছে। কিন্তু অর্থ, প্রতিপত্তি সবই রয়ে গিয়েছে। পড়াশোনা করে ছেলেমেয়েরা বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। বাড়ি আর ধনসম্পত্তি আগলে পড়ে আছেন অভিভাবকরা। মূল্যবান আসবাব, গয়নাগাটি, কী নেই বাড়িতে। এখানেই কলের মিস্ত্রী, রঙের মিস্ত্রী, পরিচারিকা সেজে বাড়িতে ঢুকে প্রথমে রেইকি। তারপর সুযোগ বুঝে ডাকাতির ছক কষে পরিকল্পনা সফল করা। এই ছক এখন পুলিশের আয়ত্তে। এবার সেইসব দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করতে ও অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সহায়তা দিতে আসরে নামল পুলিশের ‘নমন’। তবে সদস্যপদ নেওয়ার পাশাপাশি বেশকিছু দিকে চোখ কান খোলা রাখতে হবে তাঁদের। পুলিশ কর্তাদের মতে ‘নমন’কে সফল করতে হলে প্রয়োজেন প্রতিবেশীদের সাহায্যও লাগবে। নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন হওয়ার দরকার একাকী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরও। বাড়িতে নতুন পরিচারক-পরিচারিকা নিয়োগের আগে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থানায় জমা দিতে হবে। এই নিয়ম না মানলে ‘নমনে’-র কাজে ফাঁক থেকে যাবে। তবে ‘নমন’ কতটা কাজের হয়, তা সময় বলবে।

[শিশুকন্যাকে মারধরের প্রতিবাদের মাশুল, সালিশি সভায় আক্রান্ত বৃদ্ধ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement