সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: তিন লাখের নরেন্দ্র মোদি যাচ্ছেন গুজরাটে। শিলিগুড়ির এক শিল্পীর আঁকা ছবি বিশেষ কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য কিনে নিচ্ছেন সে রাজ্যের এক শিল্পপতি। যার দাম ধার্য করা হয়েছে তিন লক্ষ টাকা। অবশ্য তাতে আপত্তি নেই ক্রেতার।
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই হইচই শুরু হয়েছে শিলিগুড়ি-সহ গোটা রাজ্যে। যার আঁকা ছবি নিয়ে এত হইচই, তিনি শিল্পী অনীক চক্রবর্তী অবশ্য নিরুত্তাপ। কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি প্রথম আঁকলেও এর আগেই তিনি কখনও রজনীকান্ত কখনও অমিতাভ বচ্চন কিংবা সত্যজিৎ রায়ের মতন কিংবদন্তির ছবি এঁকে শহরবাসীর কাছে পোর্ট্রেট শিল্পী হিসেবে খ্যাতি কুড়িয়েছেন। এর মধ্যে কার্শিয়াং পাহাড়ে শুটিং করতে আসা রজনীকান্তের হাতে নিজ হাতে আঁকা ছবি তুলে দিয়েছেন মাত্র কিছু দিন আগেই। অনীকবাবু জানান, প্রধানমন্ত্রীর পঁচিশ বছর আগের ছবি এঁকেছেন। নরেন্দ্র মোদির ছবি প্রথম আঁকলেও ওই একই শিল্পপতি এর আগেও তাঁর আঁকা দার্জিলিং পাহাড়ের ল্যান্ডস্কেপের ছবি কিনে নিয়ে গিয়েছেন। তারপরই তাঁর দক্ষতার স্বীকৃতি দিয়ে প্রধামন্ত্রীর ছবির বরাত দিয়েছেন ওই শিল্পপতি প্রকাশ প্রজাপতি। শিল্পীকে শুধু জানিয়েছেন, বিশেষ কাউকে এই ছবিটি উপহার দিতে চান। তবে পেশার পেশাদারিত্ব বজায় রেখে তিনি অবশ্য জানতে চাননি কাকে উপহার দিতে চান এই ছবিটি।
[ আরও পড়ুন: এবার বিয়ের দাবিতে ধরনা প্রেমিকার, বেগতিক বুঝে পগার পার প্রেমিক ]
শুধু তাই নয়, দক্ষিণের বিখ্যাত অভিনেতা রজনীকান্তের কাছে তাঁর এমন নিখুঁত পোর্ট্রেট দেখে দক্ষিণের অনেক অভিনেতাই তাই এখন এজেন্টের মারফত অনীকের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তাঁদের নিজেদের কিংবা পরিবারের লোকের ছবি আঁকিয়ে দেওয়ার জন্য। এখনও পর্যন্ত কারও সঙ্গেই চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন না হওয়ায় তাঁদের নাম প্রকাশ করতে চাননি তিনি।
অনীকবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, প্রধানমন্ত্রীর ছবিতেই শেষ পেন্সিলের টান দিচ্ছেন তিনি। জানালেন, ছবিটি প্রায় সমাপ্ত। দু-একদিনের মধ্যেই তা ফ্রেমে বাঁধাই করতে পাঠাবেন তিনি। কাজ শেষ হয়ে এলেই তা কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হবে নির্দিষ্ট ঠিকানায়। তবে কাজের ক্ষেত্রে নিজেকে নবিশ বলেই বর্ণনা করতে ভালবাসেন পুরোদস্তুর পেশাদার বছর পঁয়ত্রিশের এই শিল্পী।
বাবা প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী ছিলেন আদ্যন্ত কমিউনিস্ট। ২০১৬ সালে তিনি মারা গিয়েছেন। মা নার্গিস চক্রবর্তী তারও আগে সেরিব্রাল স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ২০০৫-এ গত হয়েছেন। তারপর থেকে গোটা বাড়িতে একাই থাকেন। গোটা ড্রয়িংরুমই তাঁর স্টুডিও। তাঁর চোখে সেরা শিল্প, মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর ডেভিডের মূর্তি। এ ছাড়া আদিত্য চারি, অ্যালান হান্ট, ড্যানিয়েল গ্রীনে, পরাগ বোরসের মতো শিল্পীদের সৃষ্টি তাঁকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। তিনি মনে করেন তিনি এতদিন শুধু অনুশীলন করেছেন। এবার ভারতের বন্যজীবন, গ্রাম্য জীবনের উপর কাজ করতে চান। তবে ধীরে ধীরে মূর্তি গড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি তাই কখনও কুমোরটুলি আবার কখনও মাদাম তুসো মিউজিয়ামের খোঁজ রাখছেন ইন্টারনেট কিংবা বই ঘেঁটে। তবে জীবিকা নির্বাহ করতেও ছবি আঁকা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই বলেও জানান শিল্পী।
[ আরও পড়ুন: আউশগ্রামে তৃণমূলের শান্তি মিছিলে হামলা, অভিযোগের তির বিজেপির দিকে ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.