জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: সীমান্তের প্রহরী তিনি। সারা বছর দেশরক্ষার কাজে ঘুরতে হয় নানা জায়গায়। বাড়ি, প্রিয়জনদের কাছ থেকে বরাবর দূরে। মার্চ মাসে শেষবার বাড়ি ফিরেছিলেন বনগাঁর (Bongaon) গোপালনগরের বাসিন্দা সন্তু বন্দ্যোপাধ্যায়। সেসময় কথা দিয়ে গিয়েছিলেন, জুলাই মাসে ফিরে গৃহপ্রবেশ করবেন। কিন্তু কথা কথাই রয়ে গেল। ফিরতে পারলেন না আর। মণিপুরে (Manipur) রেলপ্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে ভূমিধসে শহিদ হলেন বনগাঁর জওয়ান সন্তু। শনিবার সকালে গোপালনগরের বাড়িতে দুঃসংবাদ পৌঁছনোর পর থেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সকলে।
২০০৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন সন্তু। লক্ষ্য ছিল, আঠেরো হলেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন, নিজেকে নিয়োজিত করবেন দেশের সেবায়। সেইমতো ২০০৬ সালেই ভারতীয় সেনায় (Indian Army) যোগ দেন তিনি। নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে এতদিন সুরক্ষার কাজ করেছেন। চলতি বছরের মার্চ মাসে ফিরেছিলেন গোপালনগরের বাড়িতে। দাঁড়িয়ে থেকে নতুন ঘরদোর তৈরি করিয়েছিলেন। পরিবারের সদস্যদের কথা দিয়েছিলেন, জুলাইতে এসে গৃহপ্রবেশ করবেন।
সেই কথা বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই সব ভেঙে খানখান। দেশ সুরক্ষার কাজ করতে করতেই মৃত্যমুখে ঢলে পড়লেন জওয়ান সন্তু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বাবা গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ”বাড়ি থেকে কাজে ফিরেই মণিপুরে বদলি হয়ে যায়। সেখানে রেলের কাজ চলছিল। সেখানে নিরাপত্তার কাজের দায়িত্বে ছিল ছেলে। বৃহস্পতিবার শুনলাম ওখানে ধস নেমেছে। চিন্তা হচ্ছিল। আর্মি থেকে ফোন করে জানায়, ও আর নেই। আগেরদিন সন্ধে পর্যন্তও আমাদের সঙ্গে ওর কথা হয়েছিল।” সন্তুর এহেন মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ প্রতিবেশী, বন্ধুরাও। তাঁদের বক্তব্য, ”ও খুব ভাল ছেলে। জুলাইতে বাড়ি ফিরে গৃহপ্রবেশ করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ এমন হয়ে গেল, আমরা ভাবতে পারছি না যে ও আর নেই।”
দুঃসংবাদ পাওয়ার পর থেকে কান্না যেন থামছেই না জওয়ানের স্ত্রীর। স্বামীর ছবিটি বুকে জড়িয়ে হা-হুতাশ করে চলেছেন তিনি। জানা গিয়েছে, সন্তুর একরত্তি এক কন্যাসন্তান রয়েছে। এমন অসময়ে যে বাবাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলল, তা টেরও পাচ্ছে না সে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.