অর্ণব আইচ: এবার ইছাপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি থেকে অভিনব কায়দায় অস্ত্র পাচার। তৈরি অস্ত্র নয়। আগ্নেয়াস্ত্রের বিভিন্ন অংশ আলাদা আলাদা করে ট্রাকে পাচার করছিল ট্রাক মালিক। শুক্রবার রাতে গোপন সূত্রে হানা দিয়ে ট্রাকটিকে আটক করে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। এসটিএফ প্রধান মুরলীধরন জানিয়েছেন, ঘটনায় ট্রাকের মালিক প্রেমচাঁদ কুর্মি ওরফে লাটুয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় আর কারা জড়িত তা জানতে তদন্ত চলবে বলেও জানিয়েছেন এসটিএফ প্রধান।
পুলিশ জানতে পারে, বেশ কয়েকদিন ধরেই গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি থেকে অস্ত্র পাচার হচ্ছে। কিন্তু কীভাবে তা পাচার করা হচ্ছে তা নিয়ে ধন্দে ছিলেন এসটিএফের গোয়েন্দারা। ঘটনায় বেশ কয়েক জন সন্দেহভাজনকে আটক করে জেরা করা হয়। তাতেই জানতে পারা যায়, তৈরি অস্ত্র নয়, আগ্নেয়াস্ত্রের বিভিন্ন অংশ ট্রাকে করে পাচার করা হয়। শুক্রবার রাতে এমন একটি ট্রাকে অস্ত্র পাচার হবে বলে জানতে পারেন গোয়েন্দারা। সেইমতো ছদ্মবেশে হানা দিয়ে ট্রাকটিকে আটক করে পুলিশ। ট্রাকটি থেকে উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্রের অংশ।
[‘মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয় বলছি’! আধিকারিককে ফোনে হুমকি দিয়ে শ্রীঘরে প্রৌঢ়]
ধৃত লাটুয়া দীর্ঘদিন ধরেই এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রাথমিক জেরায় জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। নোয়াপাড়ার কুমোরপাড়ার বাসিন্দা লাটুয়া। তবে এই অস্ত্রাংশগুলি কোথায় নিয়ে যাওয়া হত তা নিয়ে এখনও মুখ খোলেনি লাটুয়া। যদিও এই চক্রের সঙ্গে আর কারা জড়িত তা জানতে চাইছে পুলিশ। পুলিশের অনুমান সর্ষের মধ্যেই রয়েছে ভূত। গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির কোনও কর্মী বা আধিকারিক এই চক্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত রয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।
গত মে মাসেই গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি থেকে অস্ত্র পাচারের অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যার মধ্যে ছিল ফ্যাক্টরির দুই অফিসার ও দুই কনট্রাক্ট লেবার। তার আগের বছর ২০১৭-র সেপ্টেম্বরে অস্ত্র পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে শম্ভু ভট্টাচার্য নামে এক উচ্চপদস্থ অফিসারকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। আর তাতেই হদিশ মিলেছিল গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির অন্দরে থাকা এই জাল চক্রের। জানা যায়, ১০ বছর ধরে এই চোরা কারবার চলছিল সেনার অস্ত্র তৈরির কারখানায়। পরে ঘটনায় আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে পুলিশের হাতে। জানতে পারা যায়, এই সরকারি অস্ত্র কারখানার অস্ত্র সোজা পৌঁছে যেত মাওবাদীদের হাতে।
[‘বন্দিদশা’ থেকে মুক্তি, ঘরে ফিরলেন মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া শ্রমিক]
২০১৮-য় যখন অস্ত্র পাচারের অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তখন একটি কারবাইন-সহ সাতটি উন্নতমানের রিভলভার পাচার করা হচ্ছিল। এছাড়াও সেসময় ১৬টি ইনসাস রাইফেলের মতো ঘাতক বন্দুকের অংশ পাচার করা হচ্ছিল। পুলিশের কাছে তথ্য, মূলত এই যন্ত্রাংশগুলিকে বিহারে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর আগ্নেয়াস্ত্রের এই অংশগুলি ফের জুড়ে দেওয়া হয়। তারপর তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু বর্তমানে এই চক্রের সঙ্গে গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির কারা জড়িত তা জানতে চাইছেন এসটিএফের গোয়েন্দারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.