ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাকপুর: ভাটপাড়া-নৈহাটি সমবায় ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনায় অবশেষে গ্রেপ্তার করা হল বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের (Arjun Singh) ভাইপো সঞ্জিত ওরফে পাপ্পু সিংকে। ইতিমধ্যেই এই ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত বাকিদের খোঁজ চলছে।
বারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা (ManojKumar Verma) বলেন, “ব্যাংক তছরুপের ঘটনায় অন্তত চারবার ৪১এ ধারায় ওই বিজেপি নেতার বাড়িতে গিয়ে কমিশনারেটে হাজিরা দেওয়ার জন্য নোটিস দিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু ওই নেতা আসেননি। সে কারণে বলা হয়েছিল, আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে তবেই গ্রেপ্তার করা হবে। তারপরই এদিন পাপ্পু সিং কমিশনারেটে আসেন। ওই নেতার বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে ব্যাংক জালিয়াতিতে যুক্ত থাকার ব্যাপারে।” প্রায় ১১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে ওই নেতার অ্যাকাউন্টে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। পুলিশ ইতিমধ্যেই ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। যার মধ্যে ব্যাংকের তৎকালীন এক শীর্ষকর্তা ছাড়াও পাপ্পু সিংয়ের আপ্ত সহায়কও রয়েছে। বর্তমানে তারা হেফাজতে রয়েছে। তদন্তকারীদের কথায়, “ধৃতদের জেরা করে ব্যাংক জালিয়াতি সংক্রান্ত অনেক তথ্যই মিলেছে। যার উপর নির্ভর করে এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান কমিশনার।”
এদিকে, মণীশ শুক্লা হত্যাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে শুক্রবার সন্ধেয়য় বারাকপুর স্টেশন থেকে টিটাগড় থানা পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল করে বিজেপি। সেই মিছিলের পরে সাংসদ অর্জুন সিং বলেন, “তৃণমূল প্রশাসন চক্রান্ত করে আমাকে এবং আমার সব লোকজনকে ফাঁসাতে চাইছে। পুলিশকে দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। তৃণমূলের কাছে যাঁরা নতজানু হচ্ছেন না, তাঁদের খুন করে দিচ্ছে। কোনও ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনা না ঘটলেও পুলিশ জোর করে বিষয়টি তৈরি করছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাটপাড়া-নৈহাটি সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যানে পদে ছিলেন পাপ্পু সিংয়ের কাকা অর্জুন সিং। তৃণমূলে থাকাকালীন ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিং ভাটপাড়া পুরসভার প্রধানও ছিলেন। সেই সময় পুরসভার কাজের টেন্ডারকে কেন্দ্র করে ওই সমবায় ব্যাংকের বহু কোটি টাকা ঋণের মাধ্যমে তছরুপ হয়। মোট ২৬টি ফাইলে স্বাক্ষর হওয়ার পর ঋণ অনুমোদন হয়েছিল। যার পরিমাণ প্রথমে পুলিশ ২০ কোটি টাকার কথা বললেও পরে তা দেখা যায় ১১-১২ কোটি টাকার বেশি নয়।
কমিশনার বলেন, “পুরসভার কাজের জন্য এই ঋণ দেওয়া হলেও আমরা তদন্তে নেমে দেখেছি প্রায় সাড়ে এগারো কোটি টাকা অন্য পথে ঘুরে পাপ্পু সিংয়ের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। ব্যাংকের কোনও পদে না থাকলেও সহজেই এই টাকা ওই নেতার অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল বলে দাবি করেছেন গোয়েন্দারা। সেই কারণেই পাপ্পুকে গ্রেপ্তার করার জন্য একাধিকবার সাংসদের বাড়ি ‘মজদুর ভবন’-এ গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু প্রতিবারই বাধা পায়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.