অর্ণব দাস, বারাকপুর: এবার বিজেপির আত্মসমালোচনা অর্জুন সিংয়ের গলায়! দিলীপ ঘোষের সুরেই ভোট করানো নিয়ে বিজেপির সমালোচনায় সরব হলেন বারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং। তাঁর সাফ কথা, “আমরা ভোট করাতে পারি না। বিরোধী হলেও তাদের (তৃণমূল) থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।” রবিবারই একই ধরনের কথা শোনা গিয়েছিল দিলীপ ঘোষের গলাতেও।
রবিবার বিষ্ণুপুরে দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, “ভোট কীভাবে করাতে হয় আমরা জানি না।” এই প্রসঙ্গ টেনেই সোমবার ভাটপাড়ায় নিজের বাড়ি মজদুর ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অর্জুন সিং বলেন, “দিলীপদা অনেক সিনিয়র নেতা। এই ঘটনা উনি গতদিন অনুভব করতে পেরেছেন। আমি অনেকদিন ধরেই বলছি বাংলায় ভোট হয় না, ভোট করাতে হয়। এবার নিচুস্তর নিয়ে দলকে ভাবতে হবে, সংগঠন কার হাতে দিতে হবে, কোন লোক কাজ করবে।” বারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদের আরও সংযোজন, “আমি কাউকে ছোট করছি না তবে, একজন তৃণমূলের ইউনিয়নের অধীনে টোটো চালাবে আবার সেই যদি বিজেপির মণ্ডল সভাপতি, বুথ সভাপতি বা শক্তি প্রমুখ হয় তাহলে তো কোনওদিনই কাজ করতে পারবে না। তার তো সবসময় ভয় থাকবে টোটো বন্ধ হয়ে যাওয়ার।”
উদাহরণ টেনে অর্জুনের দাবি, “আমি এমনও মণ্ডল প্রেসিডেন্ট দেখেছি, অটো চালাচ্ছে আর অটোর পিছনে তৃণমূলের প্রচারের ব্যানার লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভোটের দিন তাঁর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। দিলীপদা অনেক পরে বুঝলেন। তাও ভালো, ওঁর মত লোক যদি সরব হন তাহলে বিজেপির নিচুস্তরে সাংগঠনিক যে ত্রুটি আছে আমরা ঠিক করতে পারব।” এর পরই বিস্ফোরণ ঘটান অর্জুন। বলেন,”আমাদের কর্মীরা-মিছিল মিটিং ভালো করতে পারে কিন্তু বাংলায় তো ভোট হয় না, মানুষ ভোট দিতে পারে না। তাই ভোট করাতে হয়। আমি এমনও দেখেছি একজন লোকসভার কনভেনার, সেই লোকই বুথের ইনচার্জ, সেই আবার বুথে বসছে। তাঁর বাড়ির লোক শক্তি প্রমুখ। তারা জীবনের কোনদিনও ভোটার স্লিপ বিলি করে না, প্রচারে বাড়ি বাড়ি যায় না। আমরা ভোট করাতে পারি না, বিরোধী হলেও তাদের থেকে অনেক কিছু সেখার দরকার আছে। শিখলে কিন্তু আমরা ভোট করাতে পারব।”
ভোটে নিজের পরাজয় নিয়েও সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই দায়ী করেছেন অর্জুন। তাঁর দাবি, “আমাকে তো সেই পরিকাঠামোতে দাঁড়িয়ে ভোট করতে হয়েছিল। পার্টি পরিকাঠামোতে টোটো চালক, অটো চালক রয়েছে, সে কী ভোট বুঝবে! তাঁদের দিয়েই ভোট করাতে হয়েছে। আর ভোটের দিন তাদের কাউকেই দেখা যায়নি, মন্ডল প্রেসিডেন্টও উধাও ছিলেন।” ক্ষোভ উগড়ে তিনি আরও জানান, “এখানে যে নিজেকে বিজেপির নেতা বলে সে তৃণমূলের কন্ট্রাক্টার। বিজেপির কোন বড় নেতা যে পুরসভায় চাকরি করছে তাঁকে সরাচ্ছে না, এদিকে যে গরিব মানুষ বুথে কাজ করে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যারা মাইক্রো লেভেলে এই অবজারভেশন করতে পারে তাঁদের দায়িত্ব দিতে হবে। কাগজে কলমে বাড়িতে বসে কাজ করলে হবে না। এইরকম ফেক সিস্টেমের উপর দাঁড়িয়ে পার্টি ভোট করালে হবে না।” স্বাভাবিকভাবেই অর্জুন সিংয়ের বিস্ফোরণ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে দলের অন্দরেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.