Advertisement
Advertisement
Royal Bengal Tiger

দলমার ‘মাও ডেরা’ থেকে চাণ্ডিল? বাঘের গতিবিধি নিয়ে উদ্বেগে অরণ্য ভবন

প্রতিদিন পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ ও পুরুলিয়া বনবিভাগ থেকে রিপোর্ট নিচ্ছে অরণ্য ভবন।

Aranya Bhawan worried about Royal Bengal Tiger roaming around in Chandil
Published by: Sayani Sen
  • Posted:January 8, 2025 9:50 pm
  • Updated:January 8, 2025 9:50 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: প্রায় ১২ কিমি পথ হেঁটে মঙ্গলবার ভোরে দলমায় পা রেখে একেবারে ‘মাও ডেরা’-য় পৌঁছে যায় জিনাতের পুরুষসঙ্গী। আর তারপরে ইউটার্ন নিয়ে সোজা চাণ্ডিল শহরের কাছে। সেখানেই মঙ্গলবার রাতে চাণ্ডিল গোলচক্র থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে একটি চার চাকার গাড়ির সামনে চলে আসে বাঘ! এমনই দাবি ওই গাড়ির চালকের। তারপর ব্রেক কষতেই সেখান থেকে সরে যায়। তবে এই বিষয়টিকে আমল দিতে চায়নি ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোওয়া বনবিভাগের চাণ্ডিল রেঞ্জ। তাহলে বাঘ কোথায়? ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ বলছে, চাণ্ডিল বনাঞ্চল কিংবা দলমা রেঞ্জ-এ থাকতে পারে।

তাহলে কী আপাতত স্বস্তি? না আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না অরণ্য ভবন। বরং উদ্বেগ বাড়িয়ে দলমা থেকে পূর্ব দিকে শুধু পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের দুয়ারসিনি এলাকায় নয়। ওই দলমা বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য থেকে ডিমনা লেকের পাশ দিয়ে আমদাপাহাড়ি, বান্দোয়ানের দুয়ারসিনিকে পাশে রেখে ঝাড়খণ্ডের নরসিংহপুর, ডাইনমারি, মাকুলির জঙ্গল হয়ে আমঝরনা থেকে দলমা-কাঁকড়াঝোড় করিডর হয়েছে ঝাড়গ্রামের কাঁকড়াঝোড়েও ঢুকে যেতে পারে। যে পথ দিয়ে জিনাত এসেছিল বান্দোয়ানের রাইকায়। তাই প্রতিদিন পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ ও পুরুলিয়া বনবিভাগ থেকে রিপোর্ট নিচ্ছে অরণ্য ভবন। সবে মিলিয়ে জিনাতের টানে ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কখনও সোজা পথে। আবার কখনও ইউটার্ন। এমনকি চড়কিপাকও খাচ্ছে বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানার জঙ্গলে। তাই বাংলা যেমন চিন্তায়। উদ্বেগ ঝাড়খণ্ড বনবিভাগও। এদিকে দলমা পাহাড় রেঞ্জের ১৩৫টি গ্রামে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ।

Advertisement

আসলে জিনাত থেকেও যে বেশি ভোগাচ্ছে তার পুরুষসঙ্গী এই রয়্যাল। কারণ, তার গলায় কোন রেডিও কলার নেই। তাছাড়া এক সপ্তাহের বেশি সময়ে শুধু একটা মাত্র কিলিংয়ের নমুনা। তাই ভরসা শুধু পায়ের ছাপ। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে দলমায় ঢুকে যাওয়ায় পর পদচিহ্নের তথ্যও সঠিকভাবে আসছে না। তবে বুধবার রাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্য অনুযায়ী চাণ্ডিলের গোলচক্রের কাছে রাঁচি-জামশেদপুর জাতীয় সড়ক থেকে ৫০০ মিটার দূরে রুদিয়া-দড়দা এলাকায় মঙ্গলবার রাতে ওই বাঘ এলাকা দিয়ে যাওয়া একটি চার চাকার গাড়ির সামনে চলে আসে। গাড়ি থামতেই সরে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ওই দিন সন্ধ্যার দিকে চাণ্ডিল বনাঞ্চলের চৌকা থানার বাড়োদার একটি স্কুলের সামনে চলে আসে। তবে এই তথ্যগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে চাণ্ডিল বনাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। চাণ্ডিল রেঞ্জের আধিকারিক শশীরঞ্জন প্রকাশ বলেন, “আমরা ওই গাড়ির চালকের সাথে কথা বলেছিলাম। তিনি আমাদের জানিয়েছেন বাঘের মতো কিছু একটা দেখেছিলাম। তাছাড়া আমরা বাড়োদা এলাকাতেও গিয়েছিলাম সেখানে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায়নি। তবে বাঘ এই এলাকার বিস্তীর্ণ জঙ্গলেই রয়েছে।”

দলমা বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য যে ১৯২.২২ বর্গ কিমি। যার অধিকাংশটাই শ্যাডো জোন। দলমা এলিফ্যান্ট প্রজেক্ট ডিভিশন জামশেদপুরের অধীনে পূর্ব, পশ্চিম দুটি রেঞ্জ থাকলেও একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের মধ্য দিয়ে সমন্বয় সাধন হচ্ছে না স্রেফ শ্যাডো জোনের কারণে। তাই ব্যবহার করা হচ্ছে ওয়াকিটকি। কিন্তু তাতেও যোগাযোগের সমস্যা মিটছে না। সেই সঙ্গে আরও বড় প্রতিবন্ধকতা ‘মাও ডেরা’। বনকর্মীদের নজরদারি থেকে টহলদারিতে ঝাড়খণ্ড পুলিশ-সহ গোয়েন্দা সহায়তা নিয়ে তবেই জঙ্গল পথে পা বাড়াতে হচ্ছে। না হলেই যে নকশাল-বনপার্টির বিপদ!

যদিও ঝাড়খণ্ড সরকারের তথ্য বলছে, গত ১৫ বছর আগে দলমা মাওবাদীদের ঘাঁটি হলেও এখন সেভাবে নেই। তবে তাদের আসা-যাওয়া যে রয়েছে তা উড়িয়ে দিচ্ছে না ঝাড়খণ্ড পুলিশ থেকে গোয়েন্দারা। ফলে ওই রয়্যাল বেঙ্গলকে ট্র্যাক করতে মাও ভয় নিয়েই মঙ্গলবার রাতে দলমা বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যের উঁচু এলাকা কঙ্কাধসায় স্থায়ী শিবির করে বাঘের সঠিক অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছে ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ।

দলমা এলিফ্যান্ট প্রজেক্ট ডিভিশন জামশেদপুরের আওতায় থাকা দলমা পশ্চিম রেঞ্জের আধিকারিক দীনেশ চন্দ্র বলেন, “জিনাতের মতো এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের গলায় কোন রেডিও কলার নেই। তাই সঠিকভাবে তার অবস্থান বোঝা যাচ্ছে না। গত এক সপ্তাহে একটা বাছুর খাওয়া আর একটা গরুকে মারা ছাড়া সেভাবে কোন কিলিং নেই। ফলে তার অবস্থান বুঝতে ভরসা শুধু পায়ের ছাপ। তাই আমরা দলমা বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যের উঁচু এলাকা কঙ্কাধশায় মঙ্গলবার রাত থেকে অস্থায়ী শিবির করে রাতে তার অবস্থান বোঝার কাজ শুরু করেছি। দিনে ঘাপটি মেরে থাকলেও রাতেই বাঘের পদচারণা শুরু হয়।”

দলমা পশ্চিম রেঞ্জের আধিকারিক অপর্ণা চন্দ্র বলেন, “দলমায় শুধু শ্যাডো জোন নয়। আরও বহুবিধ সমস্যা। তবে আশার আলো একটাই বাঘ সাধারণত পাহাড় এলাকায় থাকতে চায় না। তারা সমতল এলাকায় থাকে। পাহাড়ে তাদের শিকারে সমস্যা হয়। আমাদের নজরদারি চলছে।” মঙ্গলবার দুপুর দিকে দলমা লেকের জঙ্গলে বাঘের পদচিহ্নের খবর চাউর হলেও তাতে সিলমোহর দেয়নি ঝাড়খণ্ড বনদপ্তর। সরাইকেলা-খরসোওয়া, পূর্ব সিংভূমের জামশেদপুর, খুঁটি বনবিভাগ মিলিয়ে প্রায় ৭-৮ জন ডিএফও পদমর্যাদার আধিকারিক, পালামৌ টাইগার রিজার্ভের ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞরা এবং চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন-র তত্ত্বাবধানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের নজরদারি চলছে বলে ঝাড়খণ্ড বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement