রাহুল চক্রবর্তী: কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা! মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা দেখে ক্যাপশনটা বোধহয় এটাই হওয়া উচিত। অধীরের গড়ে এবার তাঁরই দুই শিষ্য লড়বেন তৃণমূলকে রেকর্ড ব্যবধানে জেতাতে।
[ঘরের মেয়ে যাদবপুরের প্রার্থী, মিমির উত্থানে উচ্ছ্বসিত জলপাইগুড়ির পাণ্ডাপাড়া ]
লোকসভা নির্বাচনের জন্য মঙ্গলবার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে তৃণমূল। তাতে একদিকে চমক যেমন রয়েছে, তেমনই অন্যদিকে রাজনীতির অস্ত্রেই বিপক্ষকে ঘায়েল করার মোক্ষম বার্তাটাও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বহরমপুর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করেছে অপূর্ব সরকারকে। মুর্শিদাবাদে যিনি ডেভিড নামেই পরিচিত। বর্তমানে তিনি কান্দি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক। একটা সময় অধীর চৌধুরির ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। ডেভিডের রাজনৈতিক উত্তরণে অধীরের বড় ভূমিকা ছিল, তা সকলেই জানেন। অধীর দিল্লি চলে গেলে মুর্শিদাবাদে ডেভিডই ছিলেন কংগ্রেসের ‘নিয়ন্ত্রক’। কিন্তু দল পরিচালনার সময় অধীরের একাধিক কাজের বিরোধিতা করায় ডেভিডের সঙ্গে মতপার্থক্য তৈরি হয়। অভিযোগ, অধীর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন বিধান ভবনের বাইরে ‘এক ঘরে’ করে দিয়েছিলেন ডেভিডকে। তারপরই কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেন অপূর্ব। যোগ দেন তৃণমূলে। এবার তিনি বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে রাজ্যের শাসক দলের প্রার্থী। লড়বেন তাঁর এক সময়ের ‘গুরু’ অধীর চৌধুরির বিরুদ্ধে। ডেভিডের বক্তব্য, “বহরমপুরের মানুষ অধীর চৌধুরির উপর থেকে হাত সরিয়ে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে তা প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। এখন মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের পাশে আছেন। আর তাতেই এবার বহরমপুরে ফুটবে ঘাসফুল।”
[ভোট ঘোষণার পরেও হোর্ডিংয়ে মোদি-মমতা, আসানসোলে তুঙ্গে বিতর্ক]
ডেভিড যদি অধীরের একটা ‘হাত’ হয়, তাহলে আর একটা ‘হাত’ ছিল আবু তাহের খান। বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদের এক সময়ের শিষ্য ও অতি কাছের। অধীর চৌধুরি তাঁকে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের সভাপতিও করেছিলেন। কিন্তু তিনিও একটা সময় প্রকাশ্যে তথ্য দিয়ে অভিযোগ করেন, অধীর দলবিরোধী কাজ করছেন। তারপরই অধীর-তাহের সম্পর্কে ভাঙন ধরে। তাহেরকে দলে কোণঠাসা করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে অধীরের বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগে তিনিও কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে যোগ দেন তৃণমূলে। ঘাসফুল প্রতীকে এবার তিনিই লড়ছেন মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্র থেকে। সংখ্যালঘু অর্ধু্যষিত এই কেন্দ্রে অতি পরিচিত মুখ তিনি। নির্বাচনে অধীরকে তিনি যে বেগ দেবেন, তা বলাই বাহুল্য। রাজনৈতিক মহল বলছে, অপূর্ব সরকার ও আবু তাহের খানকে প্রার্থী করে কংগ্রেসের গড়ে অ্যাডভানটেজ পেল তৃণমূল। ইসলামপুরের কংগ্রেস বিধায়ক কানাইয়ালাল আগরওয়াল কিছুদিন আগে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। এবার তিনি রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রতীকে লড়বেন। দাপুটে এই নেতা রায়গঞ্জ আসনে কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সিকে একপ্রকার কঠিন লড়াইয়ের মুখে ফেলে দিলেন তা বলাই বাহুল্য।
[মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে আগুন-আতঙ্ক, জখম বেশ কয়েকজন]
প্রত্যাশামতো মালদহ উত্তর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন মৌসম বেনজির নুর। তিনিও কিছুদিন আগে কংগ্রেস ছেড়ে রাজ্যের শাসক দলে যোগ দেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন মানস ভুঁইয়া ও অসিত মালের প্রসঙ্গ। মানসবাবু কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর বর্তমানে তিনি রাজ্যসভার নির্বাচিত সাংসদ। অসিত মাল বীরভূমের হাসন কেন্দ্রে ২০১১-তে কংগ্রেসের বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তৃণমূলে যোগ দেন। তবে ২০১৬-তে তিনি পরাজিত হন। এবার তিনি বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী। বর্তমানে যাঁরা বিধায়ক রয়েছেন, তাঁরা লোকসভায় জিতলে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। বস্তুত, অস্তিত্ব বাঁচাতে কংগ্রেস এখন সিপিএমের হাত ধরেছে। কিন্তু সদ্য প্রাক্তন সাংসদ ও বিধায়কদের কীভাবে ভোট ময়দানে ‘ট্যাকেল’ করা হবে, তাতেই নাজেহাল প্রদেশ কংগ্রেস। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রর দাবি, “তৃণমূলকে প্রার্থী খুঁজতে ভাড়া করতে হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.