মাতলার চরে এই সেই বৃদ্ধাবাস।
দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: কোনও ফোন আমেরিকা থেকে। কেউ বা আবেদন করেছেন কানাডা থেকে। আবার কোনও ফোন এসেছে কেরল, দিল্লি থেকে। আর্জি একটাই বৃদ্ধাশ্রমে থাকার বন্দোবস্ত করতে হবে। কেউ আবার পুরো পরিবারের সম্পত্তি লিখে দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে কাটাতে চান বাকি জীবনটা। বৃদ্ধাশ্রমে থাকার প্রবণতা দেখে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালকদের।
এমনই ঘটনার সাক্ষী ক্যানিংয়ের মাতলা দু’নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁদমণি বৃদ্ধাশ্রম। পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যেই বিধায়ক পরেশরাম দাস তৈরি করেছেন এই বৃদ্ধাশ্রম। বিধায়ক হওয়ার আগে থেকেই তিনি এই বৃদ্ধাশ্রম তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই মতো বৃদ্ধাশ্রমের কাজ পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড তৈরি করেছেন। প্রায় ১০ বছর ধরে চলছে এই বৃদ্ধাশ্রম। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা বিনা খরচে এখানে থাকতে পারেন আজীবন। শুধু থাকা-খাওয়া নয়, আনুসঙ্গিক সমস্ত খরচ বহন করেন বৃদ্ধাশ্রমের কর্মীরাই। আবাসিকদের প্রতিদিনের খরচ জোগানোর জন্য ইতিমধ্যেই স্বেচ্ছায় আশ্রমের লাইফ মেম্বার হয়েছেন প্রায় ৭০০ জন। তাঁরা প্রতি মাসে হাজার টাকা করে দিচ্ছেন।
মূলত, স্থানীয় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতেই ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস বেশ কিছু উদ্যোগী যুবককে নিয়ে প্রাথমিকভাবে ক্যানিং মাতলা নদীর চরে গড়ে তোলেন এই বৃদ্ধাশ্রম। নাম দেওয়া হয় চাঁদমণি বৃদ্ধাশ্রম। বিভিন্ন জায়গা থেকে আর্থিক সংস্থান করেই রাখা হয়েছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। এ বিষয়ে বিধায়ক বলেন, “ডিসেম্বর মাসেই প্রায় পাঁচশোর বেশি আবেদন জমা পড়েছে। কোনওটি আমেরিকা, কোনওটি কানাডা, আবার কোনওটি লন্ডন থেকে। বিভিন্ন মানুষজন চাইছেন আমাদের পাশে থাকতে। বহু মানুষ থাকার জন্য আবেদন করছেন। অনেকেই আবার বিদেশে থাকা সমস্ত সম্পত্তি ছেড়ে আমাদের এখানে থাকতে চান। মানুষ পারিবারিকভাবে কতটা অসহায় তা এই সব আবেদনের মাধ্যমেই বোঝা যায়।”
এখন বৃদ্ধাশ্রমে আবাসিকদের সংখ্যা ১৫। ৪০ থেকে ৪৫ জনকে এখানে রাখা সম্ভব। কিন্তু যেভাবে আবেদন পড়ছে এখানে, তাতে কাকে ছেড়ে কাকে রাখবেন বুঝে উঠতে পারছেন না ট্রাস্টের প্রতিনিধিরা। বিধায়ক আরও বলেন, ‘‘এতগুলো মানুষকে রেখে সমস্ত খরচ বহন করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। আমরা এত মানুষের সংস্থান করতে পারছি না। বিভিন্ন মানুষের সাহায্য নিয়ে চালাতে হচ্ছে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.