দেব গোস্বামী, বোলপুর: ইতিহাস সব মনে রাখে। আর ইতিহাস মনে রেখেছেন তিনি। এক বিপদেই মুহূর্তে চেনা হয়ে গিয়েছিল কারা বন্ধু, কারা বন্ধু নয়। দীর্ঘদিনের সতীর্থরা কেউ কেউ একলহমায় সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। বিন্দুমাত্র যোগাযোগ রাখেননি। কেউ কেউ তাঁর অনুপস্থিতির সুযোগে নিজেদের ঘর গোছাতে শুরু করেছিলেন। কেউ বা নিজেকেই ‘রাজা’ ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলেন। মাঝের দুটো বছর খোয়াই-কোপাই দিয়ে জল গড়িয়ে গিয়েছে। গরু পাচার মামলায় জামিনে মুক্ত হয়ে বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডল(Anubrata Mondal) ফিরেছেন নিজের ঘরে, নিজের গড়ে। বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়িতে বসার পরই ফিরল তাঁর পুরনো দাপট। তাঁর বিপদের দিনে যাঁরা দূরত্ব বাড়িয়েছিলেন, তাঁদের মোটেই ঘেঁষতে দিলেন না কাছে। তাঁরা এলেন, কেষ্টর ঘরে ঢুকলেন। কিন্তু কথা বলতে না পেরে ফের বেরিয়ে চলে গেলেন। অর্থাৎ গত ২ বছরে দলের সকলের ভূমিকা মনে রেখে তবেই জনসংযোগ করছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি।
২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর। দুটো বছর অনুব্রত মণ্ডল বন্দি ছিলেন দিল্লির তিহাড় জেলে। এই সময়ের মধ্যে জেলার বহু নেতা, অনুগামী তাঁর সঙ্গে দিল্লি গিয়ে দেখা করে এসেছেন। তাঁদের কাছ থেকে নিয়মিত দলের খবরাখবর নিয়েছেন কেষ্ট। কিন্তু এমনও অনেকে রয়েছেন, তাঁরা এতদিন ধরে অনুব্রতর সঙ্গে কাজ করার পর তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পরই সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। সেসব মানুষজনকে ঠিক মনে রেখেছেন তৃণমূল নেতা। যাঁরা একদিনও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাননি, যাঁরা কলকাতা বিমানবন্দর কিংবা বর্ধমান কিংবা বোলপুরেও ফেরাতে যাননি, তাঁদেরও পালটা দিলেন অনুব্রত। বাড়ি পৌঁছে দেখাসাক্ষাতের ক্ষেত্রেও ঝাড়াই-বাছাই করলেন তিনি।
এদিন রীতিমতো উৎসবের মেজাজে বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়িতে ফিরেছেন অনুব্রত মণ্ডল। বাড়ির নিচেই বসেছেন দীর্ঘক্ষণ। তাঁকে ঘিরে ছিলেন অনুগামীরা। আর দিল্লি থেকে সবসময়ের জন্য কাছে রয়েছেন মেয়ে সুকন্যা। আর এই বাড়িতে অনুব্রতর সঙ্গে দেখা করতে সকলের প্রবেশ অবাধ হল না মঙ্গলবার। বিপদে যাঁরা দূরত্ব বাড়িয়েছেন, তাঁদের কেউই জেলা সভাপতির কাছে গিয়ে কথা বলতে পারলেন না। ঘরে ঢুকেও বেরিয়ে আসতে হল। তার মধ্যে অন্যতম মন্ত্রী তথা খাস বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিনহা, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী। বাড়ির বাইরে পাহারায় থাকা নিরাপত্তারক্ষীরাই ঘরে ঢুকতে দিলেন না তাঁদের।
যদিও অনেকের সঙ্গে হেসে দীর্ঘক্ষণ গল্প করেছেন কেষ্ট। নলহাটির বিধায়ক রাজেন্দ্র সিং, নানুরের প্রাক্তন বিধায়ক গদাধর হাজরা-সহ অনুগামীরা কথা বলেছেন দীর্ঘক্ষণ। গরু পাচার মামলায় যারা ভুলভাল সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাঁদের দেখে রীতিমতো মুখ ফিরিয়েছেন অনুব্রত। অবশ্য এভাবে তাঁর সকলের সঙ্গে কথা না বলার নেপথ্যে অন্য একটি কারণও রয়েছে। যেসব শর্তে তিনি জামিন পেয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম, সাক্ষীদের সঙ্গে কোনওভাবে কথা না বলা। হয়ত চন্দ্রনাথ সিনহাদের সেই কারণেই এড়িয়ে যাচ্ছেন কেষ্ট মণ্ডল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.