নন্দন দত্ত, সিউড়ি: রাজনীতিতে বাবার নামডাক হওয়ার পর থেকেই কারওর সঙ্গে খুব একটা মিশতেন না কেষ্টকন্যা সুকন্যা মণ্ডল। অনুব্রত গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে আরও যেন ‘ঘরকুনো’ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। অনুব্রত অনুগতরাও বাড়িতে তেমন ভিড় জমান না। পরিবারের দু-চারজন আত্মীয় মাঝেমধ্যে বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়িতে এসে খোঁজখবর নিয়ে যান। নিন্দুকেরা বলেন, অনুব্রত আসানসোল সংশোধনাগারে থাকাকালীন ফোনে মাঝেমধ্যে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতেন। খোঁজখবর নিতেন। কিন্তু তাঁর দিল্লিযাত্রার পর থেকে একাকীত্বে ভুগছেন কেষ্টকন্যা। কার্যত নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছেন তিনি।
একসময় সকাল থেকে রাত অবধি লোকসমাগমে গমগম করত বোলপুরের নিচুপট্টির মণ্ডল বাড়ি। সেই বাড়িই এখন খাঁ খাঁ করছে। দোতলার ঘরে রয়েছেন সুকন্যা। আর স্কুলেও যান না কেষ্টকন্যা। প্রাথমিক শিক্ষিকা সুকন্যার বেতন বন্ধ করে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। খুব একটা ঘরের বাইরে বের হন না তিনি। ঘরের ভিতরে চারিদিকে খেলনা ছড়িয়ে রেখেছেন। মাঝেমধ্য়ে সেই খেলনা নেড়েচেড়ে দেখেন বলে সূত্রের দাবি। আত্মীয়স্বজন নয়, বেশিরভাগ সময় সুকন্যার সঙ্গে থাকেন এক বান্ধবী। কেউ দেখা করতে চাইলে দরজায় থাকা নিরাপত্তারক্ষীকে জানাতে হয়, সুকন্যা অনুমতি দিলে তবে অন্দরে ঢুকতে পারেন। পারিবারিক সূত্রের খবর, ভোলেব্যোম রাইস মিল নিয়েও চিন্তায় অনুব্রতকন্যা। ইডি যেভাবে বীরভূমের ‘বেতাজ বাদশাহ’কে চেপে ধরেছে তাতে চালকলের ব্যবসার ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ব্যবসার হিসেবপত্র দেখতেন সুকন্যা। সেই ব্য়বসা বন্ধ হলে ভবিষ্যত কী হবে, কোথা থেকে টাকার সংকুলান হবে, তা নিয়ে চিন্তায় কেষ্টকন্যা।
প্রতিবেশীরা বলছে, হোলির দিন দুপুরে ঘণ্টা খানেকের জন্য নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন সুকন্যা। গাড়ির কালো কাঁচ তুলে দিয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে বোলপুর শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছেন তিনি। কখনও শান্তিনিকেতন, কখনও কোপাই-খোয়াই তো কখনও প্রান্তিকে ঘুরে বেড়িয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, কোনও বান্ধবীর বাড়ি যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন। শেষে অবশ্য় বাড়িতেই ফিরে আসেন। তারপর থেকে ফের দোতলার ঘরেই রয়েছেন সুকন্যা। তবে একা মেয়ে নয়, বাবাও যথেষ্ট চিন্তায় মেয়েকে নিয়ে। তাই রাজ্য় ছাড়ার আগে মেয়েকে দেখভালের দায়িত্ব সঁপে গিয়েছেন ঘনিষ্ঠদের হাতে।
কলকাতায় যাওয়ার আগে শক্তিগড়ে বসে প্রাতঃরাশ সেরেছিলেন বীরভূমের তৃণমূলের জেলা সভাপতি। তাঁর টেবিলে দুই ‘রহস্যময়’ যুবককে বসে থাকতে দেখা যায়। সূত্রের খবর, সেখানেই ঘনিষ্ঠদের মেয়ের দেখভালের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কেষ্ট মণ্ডল। জেলা তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, স্ত্রী বিয়োগের পর থেকে মেয়েই অনুব্রতের ভরসাস্থল। তাই জেলে যাওয়ার পর থেকে মেয়ের ব্যাপারে উদ্বেগে ছিলেন তিনি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই উদ্বেগ নিয়েই মঙ্গলবার তুফান মির্ধা এবং কৃপাময় ঘোষের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি ফিরতে পারবেন কি না, ফিরলেও ততদিন পর্যন্ত মেয়ের কী হবে, সেই সব নিয়ে অনুব্রত যে চিন্তিত, সে কথা এর আগেও জেলা তৃণমূল নেতাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে ইঙ্গিত, তিনি তাঁর না-ফেরা পর্যন্ত তুফানকে মেয়ে সুকন্যার দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়েছেন অনুব্রত। উল্লেখ্য, তুফান মির্ধা অনুব্রত কন্যা সুকন্যার গাড়ি চালক। অন্য়দিকে কৃপাময়কে বোলপুর শহরের নিচুপট্টি এলাকায় নিজের বাড়ি ও দলীয় কার্যালয়ের দেখভালের কথা বলেছেন। কার্যালয়ে যাতে ঠিকমতো কাজ হয়, শোনা যাচ্ছে, সেই পরামর্শও তিনি কৃপাময়কে দিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.