ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: শান্তিনিকেতনের অন্যতম ঐতিহ্য পৌষমেলা। কিন্তু সেই মেলা পরিচালনার দায়ভার বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। একই ভাবে দোলের দিন বসন্ত উৎসবও আয়োজন করা হবে না তাও জানিয়ে দিয়েছে বিশ্বভারতী। যেহেতু দুটি অনুষ্ঠান এখন অনেক দেরি, তাই বিশ্বভারতীর এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তবে পৌষমেলা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও সমস্যা হলে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূলের বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
রাজ্যের প্রাচীন এবং ঐতিহ্যময় মেলাগুলির মধ্যে অন্যতম শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা। ১৮৮৮ সালে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট তৈরি করেন। মেলা শুরু হয় ১৮৯৪ সালের ৭ পৌষ, মন্দির উদ্ধোধনের দিন। সে দিন স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে মন্দিরের পাশে পুরনো মেলার মাঠে মেলা বসে ছিল। তখন মেলা ছিল একদিনের। ১৯২১ সালে মেলা হয় ২ দিনের। পরে ১৯৬১ সালে পৌষমেলা স্থানান্তরিত হয় পূর্বপল্লী মাঠে এবং তা বাড়িয়ে তিন দিন করা হয়। ট্রাস্টের ডিড অনুসারে মেলার খরচ বহন করে থাকে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট।
বর্তমানে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুসারে মেলা এখন ৪ দিনের। ২০১৯ সালে এই মেলা নিয়ে চুড়ান্ত বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। ৪ দিনের পরে মেলা তো ওঠেইনি, মেলা তুলতে গিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝামেলাতে জড়িয়ে পড়ে ব্যবসায়ীয়া। আর এর পাশাপাশি মেলা নিয়ে পরিবেশ আদালতের মামলাও রয়েছে। এই সব কারণের জন্য মেলার পরিচালনা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বভারতী।
এই বিষয়ে ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “পৌষমেলার একটি ঐতিহ্য রয়েছে। তাই এই মেলা করা উচিৎ। কিন্তু করোনার প্রভাব নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে।” তৃণমূলের বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “পৌষ মেলা এবং বসন্ত উৎসব এখন সারা দেশের উৎসব। তাই এই উৎসব বন্ধ করা উচিৎ নয়। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কোন সাহায্যের প্রয়োজন হলে আমরা তা করতে প্রস্তুত।” প্রাক্তনী অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন, “৭ থেকে ৯ পৌষ উৎসবের ঐতিহ্যপূর্ণ নিয়মকানুন যে পালন করা হবে, এত স্বস্তি বোধ করছি। সেগুলি বন্ধ করে দিলে দুঃখ পেতাম। কিন্তু মেলাকে ঘিরে যে বিপুল ব্যবসা হয় তা বন্ধ হয়ে গেলে আশপাশের মানুষের আর্থিক ক্ষতি হবে।” শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সাম্মানিক সম্পাদক অনিল কোনার বলেন, “বিশ্বভারতীর সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণ কমিটি কর্মিসমিতি মেলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্বভারতী পরিচালনা না করলে ট্রাস্টের পক্ষ এই মেলা করা সম্ভব নয়।” বোলপুরের ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে সুব্রত ভকত এবং সুনীল সিংহ বলেন, “বিশ্বভারতীর এই সিদ্ধান্ত দূর্ভাগ্যজনক। মেলার ঐতিহ্যে এবং সংস্কৃতি কথা ভেবে বিশ্বভারতী এটা করতে পারে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.