অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: স্কুল থেকে দেওয়া হয়েছে রহস্যজনক ফর্ম। যেখানে লিখতে হচ্ছে ছাত্র কোন ধর্মালম্বী। তার জাতি কী। এমন ফর্ম বাড়িতে আনতেই আতঙ্কের শুরু। অভিভাবকরা ভয়ে কাঁটা। তাহলে বোধহয় এনআরসি শুরু হয়ে গিয়েছে। হাওয়ার মতো এ গুজব ছড়িয়ে পড়তেই হাওড়ার পাঁচপাড়া হাই-মাদ্রাসা হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের গেটে তালা লাগালেন সংখ্যালঘু অভিভাবকরা। মঙ্গলবার সকালে এই ঘটনায় তুমুল শোরগোল পড়ে যায় এলাকায়। স্কুলের মধ্যে বন্ধ করে রাখা হয় হেডমাস্টারকে। ঘটনা এতটাই বড় আকার নেয় যে সাঁকরাইল থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী আসে এলাকায়। প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকরা। অভিযোগ, প্রধান শিক্ষককে লক্ষ করে পাথরও ছোঁড়েন অভিভাবকরা। আতঙ্কিত হেডমাস্টার জানিয়েছেন, এটা এনআরসি-র ফর্ম নয়। একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দেওয়া ফর্ম। মাস তিনেক আগে তাঁরা ছাত্রদের মধ্যে একটি সার্ভে করতে চেয়ে এই ফর্ম বিলি করে।তাতে যে এমনটা হবে বুঝতে পারিনি।
হেডমাস্টার বুদ্ধদেব দাসের দাবি, এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্কুলে এসেছিল। চাইল্ড কমিশন নামে সেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছাত্রদের মধ্যে এই ফর্ম বিলি করে। কিন্তু তা নিয়ে যে এমন কাণ্ড হবে আন্দাজ করতে পারেননি হেডমাস্টার।
ঠিক কি ছিল ফর্মে? অভিভাবকদের দাবি, ওই ফর্মে শুধু নাম নয়, লিখতে হচ্ছে মোবাইল নম্বর। কোন জেলায় জন্ম, রাজ্যের নাম। এমনকি কোন জাতি বা ধর্মের নাম তাও লিখতে বলা হয়েছে। ফেসবুক ব্যবহার করলে তার ‘ইউজারনেম’ কি তা লেখারও জায়গা রয়েছে ফর্মে। বাড়িতে সেই ফর্ম আনতেই অভিভাবকরা চেপে ধরেন ছাত্রদের। জিজ্ঞেস করে এটা কিসের ফর্ম। স্বাভাবিক ভাবেই খোলসা করে তা জানাতে পারেনি খুদে ছাত্ররা। সংখ্যালঘু অভিভাবকদের মধ্যে এরপরেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।
মঙ্গলবার দল বেধে স্কুলে যান অভিভাবকরা। রাজ্য সরকার বারণ করলেও কি ভাবে এনআরসি ফর্ম বিলি করা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। গোটা ঘটনায় তখনও অন্ধকারে প্রধান শিক্ষক। এরপরেই তাকে ঘেরাও করেন অভিভাবকরা। মারমুখী অভিভাবকদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে অফিস রুমের দরজা বন্ধ করে দেন প্রধানশিক্ষক। খবর দেন পুলিশে। বিশাল পুলিশ বাহিনী আসে ঘটনাস্থলে। আতঙ্কিত প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, সামান্য ফর্ম নিয়ে যে এতবড় কাণ্ড হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.