চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল : ঢুলিবাদ্যের সঙ্গে সানাই, বাতাসে রঙিন আবির আর গুলাল। ঠিক যেন বৃন্দাবনধামের আদলে ফুলেরাদুজের আস্বাদন। দোলের পাঁচদিন পর ফের নতুন করে রঙের উৎসব মেতে উঠল কুলটির মিঠানি গ্রাম। দোল পূর্ণিমার পরে চতুর্থীর চাঁদ যে রাতে ওঠে সেই সময় থেকে শুরু হয় পঞ্চম দোল। পঞ্চম দোল উৎসবে মূলত গ্রামের চট্টরাজ পরিবারের কূল দেবতা বাসুদেব চন্দ্র জিউয়ের বিশেষ পূজো আর্চার মধ্য দিয়েই শুরু হয়। দেড়শো বছরের বেশি সময় ধরে এই অভিনব রীতি রেওয়াজ চলে আসছে মিঠানি গ্রামে। ব্যান্ড বাজিয়ে কূল দেবতাকে গ্রাম প্রদক্ষিণ, আতসবাজি, হোলিকা দহন, এবং সবশেষে হোলি খেলা একসঙ্গে দেখা মেলে এই গ্রামে তাও আবার দোলের পাঁচদিন পর। এটাই এখানকার পরম্পরা।
[দোলের আনন্দে মাতলেন ভিক্ষুকরাও, জলপাইগুড়িতে অন্য বসন্ত উৎসব]
ঠিক পাঁচদিন আগে হোলিকা দহন করে, বাজি ফাটিয়ে, গ্রামের তিন কূলদেবতাকে পুজোআর্চা করে শুরু হয়েছিল দোল উৎসব। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই সোমবার ও মঙ্গলবার গ্রামের শুরু হয়ে গেল ফের একই প্রথায় রঙ খেলা। দোল মন্দির সেজে ওঠে আলোর রোশনাই। মন্দির থেকে বাসুদেবচন্দ্র জিউ সঙ্গে আরও দুই কূল দেবতা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউ ও দামোদর চন্দ্র জিউকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে গ্রাম পদক্ষিণ করে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের শেষ প্রান্তে। যেখানে হোম-যজ্ঞের পর হোলিকা দহন করে আতসবাজি ফাটানো হয়। শুক্রবার সকালে বাসুদেব চন্দ্রকে দোল খেলিয়ে ছেলে মেয়ে যুবক যুবতী গৃহবধূরা মেতে উঠলেন রঙের উৎসবে।
শুধু চট্টরাজ পরিবারে সীমাবদ্ধ না থেকে গত কয়েক বছর ধরেই সর্বজনীন রূপ পেয়েছে পঞ্চম-দোল উৎসব। প্রবীণ লক্ষীকান্ত চট্টরাজ বলেন একসময় গ্রামীণ মেলা বসত এখানে। যাত্রার আসরও বসত। প্রাক্তন কাউন্সিলর গৌতম চট্টরাজ বলেন কোলিয়ারি অধ্যুষিত এলাকায় রঙ খেলা মানে বাঁদুরে রঙের হোলির চল। সেই বাতাবরণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পঞ্চমদোল যেন খানিকটা বৃন্দাবনধামের আদলে ফুলেরাদুজের আস্বাদন। ঢুলিবাদ্যের সঙ্গে সানাই, বাতাসে রঙিন আবির আর গুলাল। মন্দির চত্বরে জমে ওঠে রঙ মাখামাখির খেলায়। এর অনুভূতিই আলাদা। গৃহবধূ মহুয়া চট্টরাজ বলেন যারা জেলা বা রাজ্যের বাইরে চাকরি করেন তাঁরা বাড়তি ছুটি নিয়ে আসেন পঞ্চম দোলের জন্য। এই গ্রামের নব গৃহবধূদের কাছে বাড়তি পাওনা দু-দুবার রঙ খেলার আনন্দ। পাঁচদিন পরের এই দোল উৎসব মিঠানি গ্রাম ছাড়া সারা বাংলায় খুব একটা দেখা যায় না বলেই দাবি গ্রামবাসীদের। জানা গিয়েছে, কেবল মাত্র বাঁকুড়ার পুরন্দরপুরে পঞ্চমদোলের চল রয়েছে। প্রবীণদের দাবি, নন্দ মহারাজ দ্বারকাতে এই পঞ্চমদোল প্রথম চালু করেছিলেন।
[রঙের উৎসব হোলিতে মাতল বৃন্দাবনের বিধবারা, ভিডিও ভাইরাল]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.