সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পুরুলিয়ার ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর খুনের (Purulia Councillor Murder) ঘটনায় ফের প্রকাশ্যে এল অডিও। আবার ভাইরাল হল নিহত কাউন্সিলর তপন কান্দুর ভাইপো মিঠুন এবং ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষের কথোপকথন। যেখানে নিহতের স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দুর বয়ান বদলের জন্য ‘চাপ’ দিতে শোনা যায় আইসিকে। পাশাপাশি ওই আইসিকে বলতে শোনা যায়,”তোর যদি মন চায় আমার কাছে চলে আয়, আমার বন্দুক নিয়ে গুলি করে দে, তোর কাকার খুনের বদলা হয়ে যাবে।” ঝালদার আইসির এই মন্তব্য সামনে আসার পরই উঠছে একাধিক প্রশ্ন। তবে বলে রাখা দরকার, অডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিনি ডিজিটাল। এদিকে এদিন তদন্তের স্বার্থে আইসিকে জিজ্ঞাসাবাদ করল সিট।
শনিবার ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপে শোনা গিয়েছে, ঝালদা থানার এক আধিকারিক নিহত কাউন্সিলরের ভাইপো মিঠুনকে ফোন করেন। তার পর ফোনটি আইসি সঞ্জীবকে দিয়ে দেন। আইসিকে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমার কাছে আমার নামে কমপ্লেন দিচ্ছিস। এট কি হয়? আমার নামে তোর রাগ, অভিমান রয়েছে ঠিক আছে। তুই যদি মনে করিস, আমার চাকরি চলে গেলে, সাসপেন্ড হলে, ছেলে বউ না খেতে পেলে তোর লাভ হবে, উপকার হবে,কর।” উলটোদিক থেকে মিঠুন জানান, “আমি কিছুই করছি না, কাকিমা করছে।”
পালটা অভিযোগকারিনীর বয়ান বদলের প্রস্তাব দেন সঞ্জীব। বয়ানের বেশকিছু পয়েন্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তোর কাকিমার সঙ্গে কি কখনও আমার কথা হয়েছে? কী কথা হয়েছে তুই জানিস।” এর পরই তাঁর প্রস্তাব, “আমি যামিনীবাবুকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছি। তেমন হলে তুই তোর কাকিমা দিয়ে শুধু টিপ ছাপ দিইয়ে নে। সই করতে অসুবিধা থাকলে। আমি এলটিআর বলে লিখে দেব।” জবাবে মিঠুন বলেন, “যা হবে কাল করে দেব সব।” এর পরই সঞ্জীব বলেন, “তোর যদি মন চায় আমার কাছে চলে আয়, আমার বন্দুক নিয়ে গুলি করে দে, তোর কাকার খুনের বদলা হয়ে যাবে।” এদিকে একের পর এক অডিওতে নাম জড়াচ্ছে আইসির। উঠেছে একাধিক অভিযোগ। আইসির ভূমিকা খতিয়ে দেখতে শনিবার সঞ্জীবকে জিজ্ঞাসাবাদ করল সিট। তদন্তের স্বার্থে এদিন নিহতের স্ত্রীয়েরও গোপন জবানবন্দী আদালতে রেকর্ড করা হয়েছে। ইতিপূর্বে সঞ্জীব ও মিঠুনের আরও একটি অডিও ভাইরাল হয়েছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এদিন মিঠুনের মোবাইল, চার্জার এবং দু’টি সিমকার্ড বাজেয়াপ্ত করেছে সিট।
ইতিমধ্যে প্রথম আততায়ীর স্কেচ প্রকাশ করেছে পুলিশ। দ্বিতীয় বা তৃতীয় আততায়ীর স্কেচ প্রকাশ করা হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা এখন দ্বিতীয় বা তৃতীয় আততায়ীর অবয়ব সম্পর্কে সম্যক ধারনা দিতে পারেনি। তাই সেই স্কেচের বিষয়ে পুলিশ এখনও এগোতে পারছে না। আগেই জানা গিয়েছিল, কংগ্রেস কাউন্সিলরকে খুনের পর বাইক নিয়ে বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্ত তুলিনে পালিয়ে গিয়েছিল আততায়ীরা। এর পরেই রয়েছে ঝাড়খণ্ডের মুরি স্টেশন। সেখান থেকে ট্রেন ধরে আততায়ীরা পালিয়েছিল কি না সেটা খতিয়ে দেখাছে পুলিশ।
ঝালদা-বাঘমুণ্ডির রাস্তায় যখন খুনের ঘটনাটি ঘটে সেই সময় ঘটনাস্থল থেকে ২৫০ মিটার দূরে ছিল পুলিশের টহলদারি ভ্যান। সেই ভ্যানের আধিকারিকদের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন জানান, “সিট গোটা ঘটনার তদন্ত করছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই সবকিছু বলব না। ঘটনার দিন যে টহলদারি ভ্যানে থাকা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে।”
দোল–হোলিতে উৎসবে না মেতে আবির–রঙ না ছুঁয়ে নিঃশব্দ প্রতিবাদ জানাল প্রান্তিক পুরশহর ঝালদা। দোল–হোলিতে ঝালদা শহরের গলিপথ ছিল একেবারে শুনশান, থমথমে। শনিবার রঙের উৎসবে না মেতে ঝালদা শহরের মহিলারা ওই দিন বিকালে এই খু্নের ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন। মহিলারা হাতে তপন কান্দুর ছবি নিয়ে মৌন মিছিল করেন। সেইসঙ্গে মিছিলে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল, ঝালদা পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তপন কাঁদুকে গুলি করে হত্যার বিচার বিভাগের ত্বত্তাবধানে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাই।
সিপিএমের প্রতিনিধিদল নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর ঝালদা পুর শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের স্টেশন রোডের বাড়িতে যান। ওই দলের সঙ্গে ছিলেন পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো। সিপিএমের ওই দল নিহতের স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দুর সঙ্গে কথা বলেন। তাদের লড়াই–এ পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.