স্টাফ রিপোর্টার: একেবারেই সাদামাঠা জীবনযাপনের মাদ্রাসা শিক্ষক। ছাত্রদের ধর্মীয় পাঠ দিতেন। সততার সবক শেখাতেন। মুর্শিদাবাদের সেই যুবককেই কি না কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ (NIA) তুলে নিয়ে গেল সারা বিশ্বের সন্ত্রাস, আল কায়দার (Al-Qaeda) পশ্চিমবঙ্গের মডিউলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে। যিনি টাকা তুলছিলেন। তহবিল গড়ছিলেন এবং একের পর এক সদস্যকে যোগদান করিয়েছিলেন আল কায়েদায়। তাঁর বাড়িতে হানা দিয়ে বেশ কিছু ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি এবং নিষিদ্ধ জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থার তরফে ধৃত আবদুল মোমিন মণ্ডলকে মুর্শিদাবাদ আদালতে পেশ করার পর তাকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি মিলেছে। এই গ্রেপ্তার মিলিয়ে একই মডিউলের ১১ জনকে জালে তুলল এনআইএ।
জানা গিয়েছে, ধৃত মোমিন মণ্ডল একাধিকবার বাংলাদেশ গিয়েছে। দিল্লির একটি মাদ্রাসা ও দক্ষিণ ভারতের একটি ধর্মঘেঁষা রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও তাঁর যোগ মিলেছে। বছর বত্রিশের ওই যুবকের বাড়ি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় রানিনগরের নজরানা সরকারপাড়ায়। মুর্শিদাবাদের আল কায়দা মডিউলের সদস্যদের কাছে মামুদ নামেই পরিচিত ছিল সে। মুর্শিদাবাদে যে কয়টি আল কায়দা মডিউলের বৈঠক হয়েছে, তার প্রত্যেকটিতেই যোগ দিয়েছিল মোমিন। শিক্ষক হওয়ার সুবাদে বহু কিশোর ও তরুণের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। ইতিমধ্যেই সে বেশ কিছু ছাত্রের ‘জেহাদি ভাবধারায়’ মগজধোলাই করেছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। আল কায়দা মডিউলে নতুন নিয়োগ করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও গত সেপ্টেম্বর মাসে মুর্শিদাবাদ ও কেরল থেকে ধৃত আল কায়েদার কয়েকজন ‘মাথা’র নির্দেশে টাকা তুলতেও শুরু করে সে। মূলত নতুন মাদ্রাসা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নাম করেই টাকা তুলত মোমিন। যদিও গোয়েন্দাদের অভিযোগ, নাশকতামূলক কাজেই এই টাকা ব্যবহার করার ছক কষা হয়।
মোমিন প্রতিনিয়ত জঙ্গি মডিউলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের। এনআইএ-র তরফে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত জেহাদি জঙ্গি সন্দেহে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা এই রাজ্য, দিল্লি ও কেরল ছাড়াও দেশের আরও বিভিন্ন জায়গায় ঘাঁটি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে আরও কয়েকটি রাজ্যে মিলেছে তাদের ঘাঁটি। মোমিনেরই আরও এক সঙ্গীর খোঁজ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। জানা গিয়েছে, মোমিনের মতো ওই যুবকও আল কায়েদার সদস্য নিয়োগ ও টাকা তোলার কাজে জড়িত। তার সন্ধান চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। রবিবার আবদুল মোমিন মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করার আগে তাকে বারদুয়েক এনআইএ কর্তারা ডোমকল ও রানিনগর থানায় ডেকে জিজ্ঞাসা করেছেন। বলা চলে, মাসখানেক ধরেই ওই যুবকের উপর এনআইএর নজর রয়েছে।
ধৃতের ভাইপো মুরসেলিম মণ্ডল জানান, “২৯ অক্টোবর এনআইএ’র লোকেরা এসে বাড়িতে একটি চিঠি দিয়ে যায়। তখন কাকা বাড়িতে ছিলেন না। তারা জানান, ওটা মোমিনকে দিলেই সে বুঝে যাবে। তার সূত্র ধরেই রবিবার সকালে কাকা জলঙ্গিতে বিএসএফ ক্যাম্পে যায়। সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এনআইএ-র দল কাকাকে নিয়ে বাড়িতে আসে ও তল্লাশি করে ফের থানায় নিয়ে যায়।” ধৃতের বাবা রেজাউল মণ্ডল জানান, “আমার ছেলে নির্দোষ। অফিসারেরা বলল, থানায় আসুন ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু আমরা গেলেও ছাড়েনি। ধরে নিয়ে গিয়েছে।” এলাকার সকলের প্রিয় পেশায় শিক্ষক যে আসলে জঙ্গিগোষ্ঠীক সদস্য, তা মেনে নিতে পারছেন না প্রতিবেশীরাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.