সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বুকে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরার খেতাব জিততে। জিতলেনও। আত্মবিশ্বাস যখন স্বপ্নের শিরদাঁড়া হয়ে ওঠে, তখন তাকে ঠেকায় কে! অনীক দত্ত থেকে অ্যানিতে রূপান্তরিত হওয়ার পথটাও তিনি এভাবেই পেরিয়েছিলেন। বিশ্বাস রেখেছিলেন নিজের উপর। ‘মিস ট্রান্স ইন্ডিয়া ২০১৯’-এর দৌড়ে অবশেষে ভারতসেরার মুকুট পরলেন জলপাইগুড়ির বউমা অ্যানি দত্ত চক্রবর্তী।
[আরও পড়ুন: বন্ধুর বাড়িতে মদের আসরে গিয়ে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি, পুলিশের জালে অভিযুক্ত]
গতবছরই সাত পাকে বাঁধা পড়েছিলেন প্রেমিক সাগ্নিক চক্রবর্তীর সঙ্গে। অ্যানি আদতে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের চকভৃগু এলাকার বাসিন্দা। সমাজের তথাকথিত নিয়ম, রক্তচক্ষু তথা বেড়াজালকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চিকিৎসার মাধ্যমে অনীক আজ হয়ে উঠেছেন অ্যানি। পেশায় তিনি শিক্ষিকা। তপনের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন অ্যানি। পাশাপাশি একজন সুদক্ষ মেক-আপ আর্টিস্ট এবং নৃত্যশিল্পীও বটে! বর্তমানে অ্যানির ঠিকানা জলপাইগুড়ির নয়াবস্তি। সেখানেই স্বামী-শাশুড়ি নিয়ে দিব্যি গুছিয়ে সংসার করছেন। ‘বউমা’র থেকেও ‘মেয়ে’ শব্দটাই বোধহয় প্রযোজ্য অ্যানির জন্য। বউমার এহেন সাফল্যে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত অ্যানির শাশুড়ি মৌসুমি চক্রবর্তী। আবেগ যেন বাঁধ মানতেই চাইছে না। গর্বিত স্বামী সাগ্নিকও।
এলিনা নিবেদিত ‘মিস ট্রান্স ইন্ডিয়া ২০১৯’-এর শেষ বারোতে পৌঁছে অ্যানি বলেছিলেন, “আমার বিশ্বাস আছে। ভারত সেরার দৌড়ে আমি সফল হবই। এর পরে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করব।” ‘মিস ট্রান্স ইন্ডিয়া ২০১৯’-এর প্রায় সবক’টি স্তরেই বিচারকদের মন জয় করেন অ্যানি। বিকিনি পর্বেই চূড়ান্ত নির্ণয় হয়ে যায়। বিচারকরা তাঁকে যখন প্রশ্ন করেন যে এই সুন্দরী প্রতিযোগিতার সেরার শিরোপা জিতলে ভবিষ্যতে কী করতে চান অ্যানি, তাঁর উত্তরেই বিচারকদের মন জয় করে নেন। অ্যানির জবাব ছিল, “আমি যদি ভবিষ্যতে প্রচুর টাকার মালিক হই, তাহলে সবার প্রথমে বাচ্চাদের জন্য একটা স্কুল খুলব, যেখানে আমার মতো তৃতীয় লিঙ্গের পাশাপাশি সাধারণ বাচ্চাদেরও বিনামূল্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা থাকবে। সমাজের সঙ্গে লড়াইটা যাতে তাদের কাছে সহজ হয়ে যায়, সেই চেষ্টাই করব।” ট্রান্স ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় দেশের বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিযোগীরা অংশ নিয়েছিলেন। শনিবার অ্যানি পৌঁছে যান শেষ বারোয়। রবিবার ছিল চূড়ান্ত পর্ব। তাতে শেষমেশ সেরা সুন্দরীর মুকুট ওঠে অ্যানির মাথাতেই। অ্যানির শ্বশুরবাড়ি এবং বাবার বাড়ির সকলেই তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য। সকল শুভানুধ্যায়ীর শুভকামনার ফলেই মিলেছে এই সাফল্য, দৃঢ়বিশ্বাস অ্যানির।
[আরও পড়ুন: অবশেষে প্রেমের জয়! প্রেমিকের গলায় মালা দিলেন ধূপগুড়ির লিপিকা]
প্রতিযোগিতায় নামার আগে অ্যানি জানিয়েছিলেন, “বিয়ের আগেও মডেলিং করতাম। কিন্তু সংসারে মন দেওয়ার জন্য ছয় মাস মডেলিং থেকে দূরে ছিলাম। শেষে স্বামীর উৎসাহেই ফের মডেলিং শুরু করি। মিস ট্রান্স ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান পাওয়ায় আমি খুব খুশি। সবাই আশীর্বাদ করুন, যাতে আমি আরও এগিয়ে যেতে পারি। জাতীয় স্তরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.