সৌরভ মাজি, বর্ধমান: স্বাধীনতা তো ওদেরও৷ ভালভাবে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা৷ কিন্তু অনেকেই তা মনে রাখেন না। চিরাচরিত নিয়মে দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার, নির্যাতন বন্ধ হয় না। অবলাদের উপর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনাও বারবার প্রকাশ্যে আসে। কঠোর আইন রয়েছে। তবু সেই আইনের তোয়াক্কা না করেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য চলতেই থাকে।
তবে এবছর স্বাধীনতা দিবসের পরেরদিন জীবে প্রেমের একটু অন্যরকম নিদর্শন দেখা গেল বর্ধমানে। ভারতের ৭৩ তম স্বাধীনতা দিবসে একদল পশুপ্রেমী রাস্তায় নেমেছিলেন। টমি, ভুলু, কালুদের ডেকে ডেকে মিষ্টিমুখ করালেন। হ্যাঁ, ঘুরে ঘুরে তাঁরা সারমেয়দের মুখে তুলে দিলেন রসগোল্লা। কেউ একটা, কেউবা একাধিক রসগোল্লা চেটেপুটে খেয়েছে। শুধু রাস্তার কুকুর নয়, শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো গরুকেও খাওয়ানো হয়েছে রসগোল্লা।
বর্ধমানের রাস্তায় সারমেয়দের এইভাবে রসগোল্লা খাওয়াতে দেখে পথচলতি অনেকেই দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। ব্যাপারটা ঠিক কী, তা বুঝতে। অবাক চোখে তাঁরা দেখেছেন একদল তরুণ-তরুণী নিজের হাতে রসগোল্লা তুলে দিচ্ছে পথকুকুরদের মুখে। কেউ কেউ নিজের হাতে রাস্তার গরুকেও খাওয়ালেন রসগোল্লা। শহর বর্ধমানে এমন আয়োজন সম্ভবত প্রথম। কেউ ব্যক্তিগতভাবে বাড়ির পোষ্যকে বা রাস্তার দুই-একটি কুকুরকে কখনও-সখনও হয়তো রসগোল্লা বা মিষ্টান্ন খাইয়েছেন। কিন্তু শহরের প্রায় সব বড় রাস্তা বা গলির কুকুরকে এইভাবে রসগোল্লা খাওয়ানোর দৃশ্য অনেকেই আগে দেখেননি। এদিন মোট ৫ হাজার রসগোল্লা খাওয়ানো হয়েছে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো অবলা জীবদের।
এমন দৃশ্য দেখে কেউ কেউ পাগলামো বলে টিপ্পনিও করতে ছাড়েননি। তাতে আমল দেননি ওই তরুণদল। বর্ধমানের পশুপ্রেমীদের এই দলের নাম ‘ভয়েস ফর দ্য ভয়েসলেস’। তার সভাপতি অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “কে কী বলল তাতে আমরা কিছু মনে করি না। সকল জীবেরই বাঁচার অধিকার আছে। তাদের খাওয়ার অধিকার আছে। আমরা সকলে ভালবেসে সেই অবলাদের, যাদের অনেকেই দূরছাই করে থাকেন, তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। আমাদের টিম এই সব অবলাদের ভালবাসে বলেই এমন উদ্যোগ নিতে পেরেছি আমরা।”
এনআরএস সারমেয় শাবকদের পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনার তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। বর্ধমানের এই পশুপ্রেমীরাই মোমবাতি নিয়ে মিছিল করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন সেই অমানবিক ঘটনার। রাস্তায় রোগে ভোগা, দুর্ঘটনায় জখম কুকুরদের চিকিৎসায় ২৪ ঘণ্টার টোল ফ্রি নম্বরও চালু করেছে তার। সেখানে ফোন করে খবর দিলেই সংস্থার তরফে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
ছবি: মুকুলেসুর রহমান
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.