ছবি: সুশান্ত পাল।
নন্দন দত্ত, সিউড়ি: বগটুই কাণ্ডের এক বছর পরে মুখ খুললেন গণহত্যা কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত আনারুল হোসেন। শুক্রবার রামপুরহাটে চিকিৎসা করাতে এসে আনারুল দাবি করেন, “যারা আমায় ফাঁসিয়েছে, তাদের নাম আমি ঠিক সময়ে বলে দেব।” আনারুলের হুঙ্কার পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শাসকদলের কর্মীদের ভাবিয়ে তুলেছে।
অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ রামপুরহাট এক ব্লকের দীর্ঘদিনের সভাপতি আনারুল হোসেন। গত বছর ২১ মার্চ তার ঘনিষ্ঠ তথা বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ বাড়ির সামনেই খুন হন। সেই ঘটনার পরেই বগটুই গ্রামে গণহত্যার ঘটনা ঘটে। আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ভাদু বিরোধী বহু বাড়ি। আগুনে পুড়ে শিশু ও মহিলা-সহ মৃত্যু হয় দশজনের। ঘটনার নারকীয়তায় কেঁপে ওঠে গোটা রাজ্য। বগটুই গ্রামে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বজনহারাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কাছে আনারুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনেই গ্রামে দাঁড়িয়েই নিজের দলের ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনকে গ্রেপ্তারির দাবি জানান।
সেদিনই তারাপীঠ থেকে আনারুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুর্দিনে দলের সংগঠনের হাল ধরা আনারুলের পাশে তারপরে দলের তরফে কেউ দাঁড়াননি বলে অভিযোগ করেন। শুক্রবার রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়মমাফিক শারীরিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তিনি জানান, “অনুব্রত মণ্ডলকে তিহাড় জেলে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল দেখতে যায়। আমি জেলায় আছি অথচ কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগও রাখে না।”
সিবিআই হেফাজতে থাকলেও তার অনুগামীরা দাবি করেন, আনারুল যা করেছেন তা দলের স্বার্থেই করেছেন। ভাদু খুনের পরে তিনি সকলের সঙ্গে হাসপাতালে যান। কিন্তু সিবিআইয়ের দাবি ছিল, ভাদু খুনের পরে পরিকল্পিতভাবে বগটুইয়ে নারকীয় হত্যাকাণ্ড আনারুলের অনুগামীরা করেছে। এমনকি পুলিশকে বেশ কিছুক্ষণ পর বগটুই গ্রামে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
যদিও শুক্রবার হাসপাতালে যাওয়ার পথে আনারুল জানান, “আমার বাড়ি আলাদা। আমার অঞ্চল আলাদা। আমার মতো ভাল ছেলে বিনা অপরাধে জেল খাটছে।” উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন মধুমেহতে ভুগছেন আনারুল। জেল সংশোধনাগারে হৃদরোগেও আক্রান্ত হন। রামপুরহাট থেকে সিউড়ি জেলা সংশোধনাগারে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল। শুক্রবার শারীরিক পরীক্ষা হয় তাঁর।
আনারুল তখনই জানান, “আমার মতো ভাল ছেলে বিনা দোষে জেল খাটছে। যারা আমাকে ফাঁসিয়েছে তাদের আমি চিনি। ঠিক সময়ে আমি তাদের নাম ঠিক জায়গায় বলে দেব।” এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বজনহারা পরিবারের প্রতিনিধি মিহিলাল শেখ বলেন, “আমরা চাই প্রকৃত অপরাধী শাস্তি পাক। একজন নিরপরাধকে যেন জেলে বন্দি করে রাখা না হয়। আনারুল যদি সত্যি তাদের নাম জানেন তাহলে সেকথা প্রকাশ্যে বা উপযুক্ত জায়গায় বলে দিন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.