ধীমান রায়, কাটোয়া: মাটির ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মলমূত্র। ঘরের মেঝেতে অসংখ্য গর্ত। অন্ধকারছন্ন স্যাঁতস্যাঁতে ঘর থেকে বেরোচ্ছে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ। তার মধ্যে খালি গায়ে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে এক প্রৌঢ়। এই তীব্র শীতে গায়ে শুধু একটি ছেঁড়া কম্বল। এক দু’দিন নয়, দু’-চার মাসও নয়। ঘরবন্দি অবস্থায় ওই মানসিক ভারসাম্যহীন প্রৌঢ়ের কেটেছে দীর্ঘ ২০টা বছর! তাঁর চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য নেই পরিবারের। তাই এভাবে বন্দিদশায় কার্যত মৃত্যুর প্রহর গুনে চলেছেন পূর্ব বর্ধমান (Burdwan) জেলার ভাতার থানার হরিবাটি গ্রামের বাসিন্দা শেখ নিজাম আলি (৫৪)।
প্রতিবেশীরা জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ নিজাম আলি নামে ওই ব্যক্তি একসময় আর পাঁচটা মানুষের মতোই সুস্থ স্বাভাবিক ছিলেন। সুস্বাস্থ্যের অধিকারীও ছিলেন। চাষবাস করতেন। টিউশন পড়াতেন। কিন্তু এরপরই একসময় একটু একটু করে নিজেকে ঘরবন্দি করে ফেলেন তিনি। হারিয়ে যায় তাঁর মানসিক ভারসাম্য। বর্তমানে হারিয়ে যাচ্ছে হাঁটাচলার ক্ষমতাও।
স্ত্রী সালেহা বিবি জানান, ২৩ বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। এক মেয়ে। মেয়ে যখন আড়াই-তিন বছরের, তখনই তাঁর স্বামীর মানসিক অসুস্থতা ধরা পড়ে। সালেহা বিবি বলে, “প্রথমদিকে স্বামীর চিকিৎসা করানো হয়েছিল। তারপর টাকার অভাবে হয়নি। মেয়ে বড় হলে যেটুকু জমি ছিল সেই জমি বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। এখন পরের বাড়িতে কাজ করে ও ১০০ দিনের কাজ করে আমি সংসার চালাই। স্বামীকে চিকিৎসা করানোর মতন সামর্থ্য নেই।”
প্রতিবেশী রেজাউল হোসেন, আয়েষা খাতুনরা জানাচ্ছেন, গত ১০ বছর ধরে নিজাম আলিকে জলপান করতে দেখেননি তিনি। ঘর থেকেও বের হন না। নিজেই নখ দিয়ে ঘরের মধ্যে গর্ত করেন। উলঙ্গ হয়েই থাকেন। ঘরের মধ্যে মলমূত্র ত্যাগ করেন। দুর্গন্ধ বের হয়। জানা যাচ্ছে, বর্তমানে হাঁটাহাঁটি করার ক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়েছেন নিজাম আলি। তাঁর স্ত্রীর কাতর আরজি, “একমাত্র প্রশাসনিকভাবে যদি সাহায্য করা হয়, তবেই স্বামীর চিকিৎসা করানো সম্ভব। আমার পক্ষে খরচ জোগানো সম্ভব নয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.