ছবি: প্রতীকী
বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় এক বৃদ্ধকে প্রতিবেশীরা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলেছিলেনl সেকথা মেনে ওই বৃদ্ধ তাঁর বাড়িতেই ছিলেন। তাঁকে নিয়মিত খাবার ও পানীয় জল প্রতিবেশীরা জোগান দেবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। অথচ দু -চার দিন যেতে না যেতেই ওই বৃদ্ধের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন অধিকাংশ প্রতিবেশীরা। দু-একজন ওই বৃদ্ধকে খাবার দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে তাঁদের দেওয়া হয়েছে বাধা। ওই বৃদ্ধকে কিছু মানুষের কাছ থেকে শুনতে হয়েছে কুকথাও। একদিকে নিয়মিত খাবার ও পানীয় জল না পাওয়ার কষ্ট, আবার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে অপমানিত হতে হতে দমবন্ধ অবস্থা হয়েছিল একাকী ওই বৃদ্ধের। সামাজিক বয়কটের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন তিনি। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার শান্তিপুর থানার হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগদেবীপুর গ্রামে।
নিজের ঘরে কীটনাশক খেয়ে নেন তিনি। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে নিজের ঘরের মধ্যেই পড়েছিলেন। বিষয়টি নজরে আসে কল্যাণ দাস নামে এক যুবকের। ওই যুবক ফোন করে তাঁর পরিচিতদের জানান। স্থানীয়রা জড়ো হয়ে যান। যুবক-সহ তিনজন গুরুতর অসুস্থ অশীতিপর ওই বৃদ্ধকে বৃহস্পতিবার রাতে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে বর্তমানে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ওই বৃদ্ধ।
ওই বৃদ্ধ বাগদেবীপুরের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছেন অনেকদিন আগেই। বর্তমানে তিনি একাই থাকেন বাড়িতে। মূলত ক্ষৌরকর্ম করে তিনি পেট চালান। ওই বৃদ্ধ দিনকয়েক আগে করোনা আক্রান্ত এক মহিলার ভাইয়ের বাড়িতে ক্ষৌরকর্ম করতে গিয়েছিলেন। তাতে প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয় ওই বৃদ্ধও করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। তাই এলাকার লোকজন ওই বৃদ্ধকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলেছিলেন। বাইরে কোথাও না বেরিয়ে বাড়িতেই ১৩ দিন কাটিয়েছেন ওই বৃদ্ধ।
প্রতিবেশীরা বৃদ্ধকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁকে নিয়মিত খাবারের জোগান দেবেন তাঁরা। কিন্তু দু-চারদিনের পর আর খাবার পাননি তিনি। মধু মণ্ডল নামে একজন প্রতিবেশী বলেন, “কয়েকদিন ধরে ওই বৃদ্ধকে কেউ খাবারদাবার দিচ্ছিলেন না। এমনকি, ওই বৃদ্ধকে ভাত দিতে গেলে আমাকে বাধা দেওয়া হয়। চায়ের দোকানদার তাঁকে চা দিতে রাজি হননি। খাবারদাবার না পেয়ে মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে ওই বৃদ্ধ বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।” প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মানসিক অবসাদ থেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ওই বৃদ্ধ। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.