দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: মাস ছয়েক আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। একমাত্র ভরসা ছিল বড় ছেলে। দিন কুড়ি আগে সে-ও ঘরছাড়া হয়েছেন। তাঁকে ফিরে পেতে মানত করতেই গঙ্গাসাগরে এলেন সেই অসহায় বৃদ্ধা। তাঁর বহুদিনের ইচ্ছে ছিল গঙ্গাসাগরে আসার। কিন্তু তাঁকে যে ছেলেকে খুঁজতে গঙ্গাসাগরে আসতে হবে, তা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেননি বৃদ্ধা। ছেলেকে ফিরে পেতে চোখের জলে কপিলমুনির মন্দিরেও পুজোও দিলেন তিনি।
দিন কুড়ি আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন বাড়ির একমাত্র রোজগেরে ছেলে। চারিদিকে বিস্তর খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান মেলেনি তাঁর। আর তাই ছেলেকে খুঁজতে দুই সঙ্গীকে নিয়ে গঙ্গাসাগরে চলে এসেছেন বৃদ্ধ মা শোভা সর্দার। ছেলের নাম গয়ারাম সর্দার। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং থানার হিমছে খালি গ্রামে। রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন গয়ারাম। জানা গিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে পাড়ার এক বন্ধুর সঙ্গে ভারত সেবাশ্রম সংঘের কলকাতার অফিসে যাতায়াত ছিল। সে সেখানে রয়েছে কি না জানতে খোঁজ-খবর করা হয়। কিন্তু তাঁর হদিশ মেলেনি। এমনকী গয়ারামের ফোনটিও বন্ধ বলে খবর। তাই গঙ্গাসাগর মেলায় এসে শোভাদেবী দীর্ঘক্ষণ ভারত সেবাশ্রম সংঘের কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমনকী শুধু ভারত সেবাশ্রম সংঘ নয় আশপাশের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিতেও খোঁজ করেছেন তিনি। কিন্তু কোথাও দেখা মেলেনি বাড়ির বড় ছেলে গয়ারাম সরদারের।
শোভাদেবী হারানো ছেলেকে ফিরে পেতে কপিলমুনির মন্দিরে পুজো দেন। মানতও করেন হারানো ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য। এ বিষয়ে শোভারানীদেবী বলেন, “বেশ কিছুদিন আগে বাড়ি থেকে ছেলে বেরিয়ে গিয়েছে। তখন আমি ওকে বলেছিলাম যে, ‘আমি এবছর গঙ্গাসাগর মেলায় যাব।’ সেজন্য ওর বাবার ছবির নিচে আট হাজার টাকা রেখে দিয়ে গিয়েছিল। ৫০০ টাকা আমার হাতে দিয়ে গিয়েছে। বলেছিল, ‘তুমি গঙ্গাসাগরে যেও।’ কিন্তু এইভাবে কাউকে কিছু না বলে চলে যাবে তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি।” ছেলেকে খুঁজতে গঙ্গাসাগর মেলার ৪ নম্বর রাস্তার কাছে হোগলা পাতার নিচে কয়েকদিন ধরেই বসে আছেন শোভাদেবী। সঙ্গে রয়েছেন পাড়ার আরও দুই সঙ্গী জন্মেঞ্জয় নস্কর ও অনিতা নস্কর। শোভাদেবী জানিয়েছেন, ছেলের খোঁজে প্রতিবছর কপিল মুনির মন্দির আশ্রমে আসবেন তিনি। পৌরাণিক যুগ থেকে হারানো ছেলেকে খুঁজে পেতে গঙ্গাসাগর মেলায় আসেন বহু মানুষ। শোভাদেবীও ব্যতিক্রম নন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.