মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: ডানা ভেঙেছে সিবেটের, ঘুঘুর আবার পা ভাঙা। বাসা ভেঙে গিয়েছে বাবুই পাখিদের। রক্তাক্ত কোকিল, চড়াই, বুলবুলি, মাছরাঙার ছানাদের ছোট্ট মখমলে শরীর। আহত হয়েছে কাঠবিড়ালির দল। সুপার সাইক্লোন আমফানের তাণ্ডবে যেমন ভিটেহারা মানুষ, তেমনই সংকটে পক্ষীকুলও। ঝড়ের দাপটে গাছপালা ভেঙে যাওয়ায় নীড়হারা, সাথীহারা তারা। আহত এই অবলা প্রাণীদের শুশ্রূষায় বন্ধু হয়ে এগিয়ে এল হাওড়ার একদল তরুণ স্বেচ্ছাসেবী। তাদের উদ্ধার করে খাদ্য, পানীয় ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই দলের লক্ষ্য, প্রকৃতির বন্ধুদের প্রকৃতির কোলে ফিরে যেতে সাহায্য করা।
গত বুধবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের সাত জেলার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে প্রলয়। ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে আমফান তছনছ করে দিয়েছে সবকিছু। বাস্তুহারা হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। আর জীবন-জীবিকা বিপন্ন হয়েছে। তাদের পাশে থাকছে সরকার ও অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাও। কিন্তু পাখিদের দল যে নিরুপায়। কোথাও গাছের ডালে থাকা পাখির বাসা লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে। তো কোথাও ডালে থাকা সাধের শেষ আশ্রয়টি ছিন্নভিন্ন গিয়ে গিয়েছে। আর রক্তাক্ত হয়েছে পাখিদের দল।
হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের অন্যতম সদস্য শুভ্রদীপ ঘোষ বলেন, ”দেখা যাচ্ছে শয়ে শয়ে পাখির বাসা গাছের ডালের সঙ্গে মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে সেই বাসা। আবার দেখা যাচ্ছে, জলের মধ্যে পড়ে রয়েছে কারও বাসা। হাবুডুবু খাচ্ছে বড়দের সঙ্গে সদ্য ডিম ফুটে পৃথিবীর আলো দেখা কচিকাঁচাও। কোথাও আবার ডিমের ভিতর থেকে উঁকি মারছে ছানাদের দল। ঝড়ের ঝাপটায় কারো ভেঙেছে ডানা, কারো আঘাত লেগেছে মাথায়, তো কারো ছোট্টো দেহখানি রক্তাক্ত হয়েছে। আঘাত, ক্ষুধা তৃষ্ণায় উঠে দাঁড়ানোর, ডানা মেলার শক্তি হারিয়েছে ছোট্ট প্রাণীগুলো। আবার কারো দেহ থেকে চলে গিয়েছে প্রাণবায়ু।” এই অবস্থায় যৌথ পরিবেশ মঞ্চের সদস্যরা আমতা, বাগনান, শ্যামপুর-সহ হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে উদ্ধার করে ওই অসহায় পাখিদের। যারা জীবিত অথচ নীড়হারা, তাদের খড়কুটো দিয়ে আপাতত বাসা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আশ্রয় দেওয়া হয়েছে কাঠবিড়ালিদের। খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আহত পাখিদের প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়েছে।
অসহায়, অবলাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বৈচিত্র্য বিষয়ের গবেষক সৌরভ দুয়ারী। তিনিও অন্যদের মতো নিজের হাতে পাখিদের পরিচর্যা করেন। হাওড়ার যৌথ পরিবেশ মঞ্চের সদস্য শুভ্রদীপ বলেন, ”আমরা যে যেই এলাকার বাসিন্দা, সেখান থেকে উদ্ধার করা পাখিদের নিজেদের কাছে প্রাথমিক ভাবে রেখে তাদের দেখভালের ব্যবস্থা করি। পশু চিকিৎসকদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে তাঁদের পরামর্শমতো উদ্ধার হওয়া পাখিদের চিকিৎসা চালানো হচ্ছে, দেওয়া হচ্ছে খাবারও। পাখিদের সুস্থ করার চেষ্টা চলছে জোর কদমে। আমাদের লক্ষ্য আগে পাখিদের সুস্থ করে তোলা। তারপর প্রকৃতির কোলে আমরা তাদের ছেড়ে দেব। যদি কোনো পাখির অসুস্থতা থেকে যায়, তাহলে আমরা সেই পাখিকে সল্টলেকের প্রাণী চিকিৎসা কেন্দ্রে দিয়ে আসব।” তাঁদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। সত্যি, এমন কিছু মানুষ-বন্ধু আছে বলেই হয়ত ওরা প্রতিকূলতা কাটিয়ে ফিরে আসতে পারে নিজেদের জীবনের ছন্দে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.