সম্যক খান, মেদিনীপুর: গ্রামবাসীর তাড়া খেয়েছিল হাতির দল। এক জঙ্গল থেকে আরেক জঙ্গল যেতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল তারা। যাত্রাপথে বাঁধে জলপান করতে নেমে ডুবে গেল তিন দিনের এক সদ্যোজাত হস্তিশাবক। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার সকালে গোয়ালতোড়ের পাথরমারি মৌজার কদমডাঙা খয়েরবাঁধে। সন্ধ্যায় শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী ঘটনার পর থেকেই ওই জঙ্গলে হাতির পালদের কাছাকাছি ভিড়তে পারেননি বনদপ্তরের কর্মীরা। ফলে তারা হস্তিশাবককেও উদ্ধার করতে পারেনি। তবে হাতির দলটিই মৃত হস্তিশাবককে জল থেকে তুলে জঙ্গলের ভেতরেই কয়েকশো মিটার দূরে নিয়ে গিয়ে ঘিরে রেখেছে। রূপনারায়ণ বিভাগের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “পুরো পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। হাতির দলটি না সরলে মৃত হস্তিশাবকটিকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। বনদপ্তরের পক্ষ থেকে এলাকার মানুষের প্রতি সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। যাতে এই সময়কালে হাতির দলকে কেউ উত্যক্ত না করতে পারে।”
মাসখানেক ধরে বিহারের দলমা থেকে আসা ৫০-৫৫ টি হাতির একটি দল গড়বেতা ও গোয়ালতোড়ে ঘোরাঘুরি করছে। মাঝে একবার তারা সীমান্ত পেরিয়ে বাঁকুড়া চলে গেলেও কয়েকদিনের মধ্যেই তারা ফের ফিরে আসে। বনদপ্তর সূত্রের খবর ওই দলটিরই এক হস্তিনী গত তিনদিন আগে সখীশোলের জঙ্গলে এক হস্তিশাবকের জন্ম দেয়। সাধারণত হাতির দলের কারও বাচ্চা হলে তারা দিনকয়েক সেখানেই থেকে যায়। হস্তিশাবকটি ভাল করে চলাফেরা না করা পর্যন্ত তারা অন্য কোথাও পাড়ি দেয় না। কিন্তু সখীশোল এলাকার গ্রামবাসীরা নিজেদের জমির চাষ বাঁচাতে হাতির দলকে তাড়াতে থাকে। তাদের লক্ষ্য করে বাজি পটকাও ছুঁড়তে থাকে। বাধ্য হয়েই হাতির দলটি গত মঙ্গলবার সখীশোল ছেড়ে পাড়ি দেয় পাথরমারির দিকে।
হুমগড় রেঞ্জের রেঞ্জার বাবলু মাণ্ডি বলেছেন, “পাথরমারিতে কদমডাঙা খয়েরবাঁধে জল খেতে নামে হাতির দলটি। নেমেছিল সদ্যোজাত হস্তিশাবকটিও। সেখানেই পা হড়কে ডুবে যায় সে।” বনদপ্তরের এক কর্তার কথায়, প্রায় ঘন্টাদুয়েক ধরে তাকে জল থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছিল হস্তিশাবকটির মা ও অপর এক দাঁতাল। দুজনে মিলে আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু বাঁচাতে পারেনি। বর্ষাকালে জল বেশী থাকায় গভীরে ডুবে যায় সে। শেষমেশ মৃত হস্তিশাবকটিকে হাতির দলের সদস্যরাই তুলে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যায়। মৃত হস্তিশাবকটিকে ঘিরে রেখেছে বাকি দলটি। এই সময়টা খুবই বিপজ্জনক বলে মনে করছেন বনকর্তারা। তাই কোনও গ্রামবাসী যাতে গভীর জঙ্গলে বিশেষ করে হাতির দলের কাছাকাছি না যান বা উত্তক্ত না করেন সেই বার্তাও দেওয়া হচ্ছে। সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে বনরক্ষা কমিটিকেও। হাতির দল এলাকা ছাড়লে তারপরই মৃত হস্তিশাবকের ময়নাতদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএফও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.