সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: এ যেন লকডাউন পালন না করার শাস্তি! বৃদ্ধ দিনমজুরকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে ‘খুন’ করল রেসিডেন্ট দাঁতাল। রবিবার ভোর পাঁচটা নাগাদ পুরুলিয়ার ঝালদা বনাঞ্চলের কুটিডি এলাকার এই ঘটনায় এমন কথাই বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আসলে দু’সপ্তাহেরও বেশি সময়ের লকডাউনে ভাঁড়ারে টান পড়েছে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ গুলোর। তাই সংসার চালাতে গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে ভাটায় কাজ শুরু করেন ওই বৃদ্ধ। গত শনিবার রাতে ভাটায় ইট তৈরির মাটি ভিজিয়ে রেখেছিলেন তিনি। ইট তৈরির জন্য রবিবার ভোর হতেই ঘর ছাড়েন বৃদ্ধ। বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিমি দূরে ভাটায় পৌঁছে অন্যান্য শ্রমিকদের সঙ্গে দিব্যি কাজ শুরু করেন। সেই সময়ই যেন সাক্ষাৎ যমদূত সামনে এসে দাঁড়ায়! একেবারে দু’-তিন ফুট সামনে দাঁতালকে দেখতে পেয়েই শ্রমিকরা পালিয়ে যান। কিন্তু কাজে ডুবে থাকা বছর ৬১-এর ফণি মুড়া বুঝে উঠতে পারেননি যে দাঁতাল তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে। কিছু বোঝার আগেই তাঁকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে একাধিকবার মাটিতে আছড়ে মারে ঘাপটি মেরে থাকা দাঁতালটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বৃদ্ধের। মুহুর্তে অপারেশন সেরে খামার ফের জঙ্গলে গা ঢাকা দেয় ওই দাঁতাল।
খবর বনদপ্তরের কানে যেতেই বনকর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন ঝালদা এক বনাঞ্চলের আধিকারিক অমিয়বিকাশ পাল। এরপর সেখানে যায় পুলিশ। বনাঞ্চলের আধিকারিকের কথায়, “এটা রেসিডেন্ট দাঁতাল। দীর্ঘদিন ধরেই খামারের জঙ্গলে থাকে। মাঝে মধ্যেই কলমা এলাকায় আসে। কোটশিলা বনাঞ্চলেও যায়। এমনকী তার ঝাড়খন্ডেও যাওয়া-আসা রয়েছে। খুব দুঃখজনক ঘটনা। ওই পরিবার যাতে দ্রুত ক্ষতিপূরণ পায় তার সবরকম ব্যবস্থা করছি।” বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই রেসিডেন্ট দাঁতালটি গত শনিবার রাতে কোটশিলা বনাঞ্চলে ছিল। সেখান থেকে ঝালদা বনাঞ্চলের কলমা হয়ে রবিবার ভোর রাতে খামার জঙ্গলে ফিরছিল।
মৃতের স্ত্রী টুনুবালা মুড়া বলেন, “রাত থেকেই এত ভোরে ঘর থেকে বের হতে বারণ করছিলাম। দিনকাল ভাল নয়। কি সব রোগ ছড়িয়েছে। পুলিশ দেখতে পেলেই লাঠি মারছে। তাই ঘরে যা আছে সেই দিয়ে চলে যাবে বলেছিলাম। কিন্তু কথা শোনেননি।” আসলে লকডাউন বেড়ে যাওয়ায় হাতে আরও বেশি করে অর্থ সংগ্রহ করে রাখতেই ভোরবেলায় ওই ইট ভাটার কাজে যান বৃদ্ধ।
ছবি: অমিত সিংদেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.