দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: পরিচারিকার জন্য খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন গৃহকর্তা। সেই বিজ্ঞাপন দেখেই পরিচারিকার ছদ্মবেশে বাড়িতে তিনদিন কাজ করে রেইকি করে যায় মানসী সিংহ। তারপর সুপরিকল্পিতভাবে নতুন পরিচারিকার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার অজুহাতে গৃহকর্তাকে পূর্ব মেদিনীপুরে (Purba Medinipur) ডেকে পাঠিয়ে অপহরণ করে চার দুষ্কৃতী। পরিবারের কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেও শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত পোলবা থানার পুলিশের তৎপরতায় অপহরণের ১০ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার বৃদ্ধ। পুলিশের জালে চার দুষ্কৃতী। ধৃতদের বৃহস্পতিবার সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে চুঁচুড়া আদালতে তোলা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অপহৃত ওই বৃদ্ধের নাম জীবনকৃষ্ণ পাল(৭২)। বাড়ি পোলবার শংকরবাটি এলাকায়। ছেলে, বৌমা ও নাতিকে নিয়ে শংকরবাটির বাড়িতেই থাকতেন বৃদ্ধ। ছেলে প্রসেনজিৎ পেশায় ব্যবসায়ী। বাড়ির কাজের জন্য সম্প্রতি পরিচারিকার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেই মতো মাস চারেক আগে খবরের কাগজে পরিচারিকার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর অনেকেই যোগাযোগ করে। এর মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরের বাসিন্দা মানসী সিংহকে মাস দেড়েক আগে পরিচারিকা হিসেবে কাজে বহাল করেন জীবনকৃষ্ণবাবু। কিন্তু তিন দিন কাজ করার পর মানসী গৃহকর্তাকে জানায়, সে আর কাজ করবে না। বৃদ্ধ তাকে অনুরোধ করে যদি কোনও পরিচারিকা থাকে চেনা, তাহলে সে যেন যোগাযোগ করে। কিন্তু এই তিন দিন কাজ করার সুবাদে জীবনকৃষ্ণ বাবুদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা এবং বাড়ির অন্যান্যদের গতিবিধি সম্পর্কে রেইকি করে যায় মানসী। এরপর ওই বৃদ্ধকে অপহরণ করার ছক কষে সে।
পুরো অপারেশন সফল করতে সে সঙ্গে নেয় মমতা মাইতি নামে এক মহিলা ও বিশ্বনাথ ভৌমিক এবং কল্যাণ মন্ত্রীকে। সকলেরই বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরে। কল্যাণের বাড়ি নন্দীগ্রাম, বিশ্বনাথের বাড়ি চণ্ডীপুর ও মমতার বাড়ি বাজকুল এলাকায়। কিন্তু পোলবায় বাড়িতে গিয়ে গৃহকর্তাকে অপহরণ করলে ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই পরিকল্পনা মাফিক অপহরণের ছক কষে অপহরণকারীরা। মানসী মঙ্গলবার সন্ধেয় জীবনকৃষ্ণবাবুকে ফোন করে মানসী জানায়, একজন পরিচারিকার খোঁজ পাওয়া গেছে। কিন্তু সে একা থাকে তাই তার পক্ষে অতটা দূরে যাওয়া সম্ভব নয়। গৃহকর্তা তাকে জানিয়েছিলেন গাড়ি ভাড়া করে তাঁকে নিয়ে আসতে। প্রত্যুত্তরে মানসী জানায়, একা ওই পরিচারিকা যেতে চাইছেন না।
মানসীর কথায় বিশ্বাস করে জীবনকৃষ্ণবাবু বুধবার সকালে গাড়ি নিয়ে পরিবারের ওই পরিচারিকাকে আনতে পূর্ব মেদিনীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর পর অপহরণকারীরা জীবনকৃষ্ণবাবু ও তার গাড়ির চালককে অপহরণ করে গাড়ির মধ্যে বন্দি করে রাখে। অপহরণকারীরা সকলের নজর এড়াতে গাড়িটিকে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর থানার গুড়গ্রাম এলাকার একটি জনবসতিহীন এলাকায় নিয়ে যায়। সেখান থেকেই বৃদ্ধকে তার ফোন থেকে ছেলেকে ফোন করতে বাধ্য করে। ছেলে প্রসেনজিৎ জানান, বাবা তাকে কাঁদতে কাঁদতে ফোন করে জানান তাকে অপহরণ করে তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে। এরপর ওই ফোন থেকেই অপহরণকারীরা প্রসেনজিৎকে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর জানিয়ে দেয়।
রীতিমতো ভয়ে প্রসেনজিৎ সঙ্গে সঙ্গে পোলবা থানায় গিয়ে একটি অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। এর মাঝে একবার ভিডিও কলের মাধ্যমে অপহরণকারীরা তাকে তার বাবার সঙ্গে কথাও বলায়। কিন্তু কোন জায়গায় তারা রয়েছে এটা কখনোই জানায়নি অপহরণকারীরা। পোলবা থানার ওসি বাপি হালদার অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রসেনজিৎকে নির্দেশ দেন যে তিনি যেন অপহরণকারীদের বলেন, নেটওয়ার্কের সমস্যার জন্য টাকা ট্রানস্ফার করতে দেরি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে টাকা ট্রান্সফার করতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। ওসির নির্দেশমতো অপহরণকারীদের টাকা সমস্যার কথা জানায় প্রসেনজিৎ। ততক্ষণে বৃদ্ধের টাওয়ার লোকেশন চিহ্নিত করে পুলিশ নিশ্চিত হয়, পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর থানার গুড়গ্রামে বৃদ্ধকে আটকে রেখেছে অপহরণকারীরা। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ভগবানপুর থানার সহযোগিতায় পোলবা থানার পুলিশ গুড়গ্রামে একটি নির্জন জায়গায় গাড়িটিকে ঘিরে ফেলে। পুলিশ দেখে অপহরণকারীরা গাড়ি থেকে নেমে পালাতে গেলে পুলিশ তাঁদের হাতেনাতে ধরে ফেলে। বৃদ্ধ এবং তার গাড়ি চালককে উদ্ধার করে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.