সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: এ যেন সিনেমার দৃশ্য। ইটের উঁচু দেওয়াল টপকে হঠাৎ উড়ে এল প্লাস্টিকে মোড়া মোবাইলের ব্যাটারি, চার্জার, তা লুকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এক কয়েদি। একরমই চিত্র দেখে চোখ কপালে উঠেছে পুরুলিয়া সংশোধনাগারের কারারক্ষীদের। তবে বন্দি সেই মোবাইল লুকিয়ে রাখার আগেই তাদের হাতেনাতে পাকড়াও করেছে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ।
ডাকাতির মামলায় বিচারাধীন শেখ নিয়ামত নামে এক ব্যক্তি। ৭ মার্চ সংশোধনাগারে তার কাছেই মোবাইল দেখতে পান কারারক্ষীরা। শেখ নিয়ামতের সঙ্গে ব্যাটারি ও চার্জার দেখতে পান কারারক্ষীরা। তবে ঘটনার জেরে নড়েচড়ে বসেছে পুরুলিয়া সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। প্রশ্ন ওঠে সংশোধানাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও। শুধুমাত্র মোবাইল নয়, এইভাবে বাকি বন্দিরাও তো বাইরে থেকে নিজেদের প্রয়োজনীয় নানা ব্যবহার্য অনায়াসেই নিয়ে আসতে পারেন সংশোধনাগারের অন্দরে। পুরুলিয়া সংশোধনাগারের চিফ কন্ট্রোলার ও সুপারিনটেনডেন্ট ইনচার্জ ভূপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ঘটনার পর পুরুলিয়া সদর থানায় অভিযোগও করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে মোবাইল সরবরাহকারীকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।
ঘটনার তদন্তে নেমে জানা যায়, ওই ধৃতের ভাই বাইরে থেকে একটি প্যাকেটে করে এই মোবাইল ছোঁড়ে সংশোধনাগারের অন্দরে। এরপর শেখ নিয়ামত তা সবার অলক্ষ্যে লুকিয়ে রাখতে যায় সংশোধনাগারের ভিতরে। ৮ মার্চ ধৃতের ভাই শেখ শুকুর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। তারপর তার খোঁজ চালিয়ে ৯ মার্চ ভোরবেলা পুরুলিয়ার বাসস্ট্যান্ড থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দিনই তাকে পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে ১৪ দিন জেল হেফাজত দেয় বিচারক। সুপারিনটেনডেন্ট ইনচার্জ ভূপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ওই বন্দির কাছ থেকে মোবাইল, ব্যাটারি ও চার্জার আমাদের হেফাজতে নিই। এই বিষয়ে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করি।”
সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বন্দির সঙ্গে তার ভাই ধৃত শেখ সুকুর কয়েকদিন আগে দেখা করার সময়ই রীতিমতো নির্দিষ্ট দিন, সময় পরিকল্পনা করে এই কাজ করে। জেলা সংশোধনাগার ও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, “গত ৭ মার্চ বেলা ১১টা ১৫ মিনিটের সময় সংশোধনাগারের স্নানাগারের পাশে ওই বন্দির হাতে এক কারারক্ষী প্লাস্টিকে মোড়া মোবাইল, ব্যাটারি ও চার্জার দেখতে পান।” ওই সংশোধনাগারের দক্ষিণ দিকের পাঁচ নম্বর পাঁচিলের একপাশে বাইরে থেকে প্লাস্টিকে এই মোবাইল ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
ধৃত শেখ নিয়ামতের বিরুদ্ধে জেলার একাধিক থানায় খুন, ডাকাতি ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ঘটনায় মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। ২০১৭ সালে পুরুলিয়া মফস্বল থানার কুস্তাউরে ভোজালির কোপে একজনকে খুন করার ঘটনায় তার এখন বিচার চলছে। ওই ঘটনায় একজন জখমও হয়। তবে এই প্রথম নয়, সংশোধনাগারে বন্দিরা মাঝে মধ্যেই এই ধরণের অনৈতিক কাজ করে থাকেন। শুধু মোবাইল নয়, রীতিমতো বুদ্ধি খাটিয়ে তারা ঘোল খাওয়ান কারারক্ষীদের। সংশোধনাগারে বসেই তারা নানা অপরাধমূলক কাজেও লিপ্ত থাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.