শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: এনআরসি আতঙ্কে ভুগছে চন্দ্রকোনার প্রায় ১০০ পরিবার। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর ঘোষণার পরই ঘুম ছুটেছে পরিবারগুলির। কী করবেন? কোথায় যাবেন? শেষ পরিণতিই বা কী হবে?, সেই ভাবনায় জেরবার পাঁচশোর বেশি উদ্বাস্তু মানুষজন।বিডিওর দ্বারস্থ হয়েছেন পরিবারগুলি। চন্দ্রকোনা দুই নম্বর ব্লকের বিডিও শ্বাশত প্রকাশ লাহিড়ী বলেন, ওঁদের সমস্যা অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে দেখা হবে। নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকায় বিষয়টিতে নজর দেওয়া যাচ্ছে না। নির্বাচনী পর্ব শেষ হলেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়েছেন চন্দ্রকোনা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হীরালাল ঘোষ। তিনি বলেন, “চন্দ্রকোনার নীলগঞ্জ গ্রামে ওঁরা দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বাস্তু হয়ে বসবাস করছেন। ওঁদের সমস্ত রকমের প্রশাসনিক সাহায্য করা হবে।”
ঘটনায় প্রকাশ, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার পরিবার এ রাজ্যে চলে আসেন। তাঁরা তৎকালীন রাজ্য সরকারের সহায়তায় বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে ৩০টি পরিবার চলে আসে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার নীলগঞ্জ গ্রামে। তৎকালীন ‘রিফিউজি পুনর্বাসন কমিটি’র তরফে ওই ৩০টি পরিবারকে চার থেকে পাঁচ একর পর্যন্ত জমি লিজ হিসাবে দেওয়া হয়। ৯৯ বছরের লিজ পাওয়া জমিতেই পরিবারগুলি বসবাস করতে শুরু করে। একে একে পরিবার ভাঙতে ভাঙতে এখন ১০০র বেশি পরিবারে এসে ঠেকেছে। প্রত্যকের ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, স্কুল সার্টিফিকেট, এমনকী আধার কার্ড আছে। কিন্তু জমির রেকর্ড নেই। এমনকী, ১৯৭১ সালের আগে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা এদেশের নাগরিকত্বের কোনও প্রমাণপত্রও জোগাড় করতে পারেননি। এদিকে এই উদ্বাস্তু পরিবারের অনেকেই এখন জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত। কেউ শিক্ষকতা করেন তো কেউ সরকারি কর্মচারী। এমনকী, সেনাবাহিনী চাকরি করছেন অনেকেই।
তাহলে এনআরসি আতঙ্ক কেন? চন্দ্রকোনা বসবাসকারী উদ্বাস্তু পরিবারের সদস্য তুষার সমাদ্দার বলেন, “আমার বাবা শশধর সমাদ্দার ১৯৪০ সালে যখন নদিয়ায় এসেছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল তিন বছর। ১৯৬৫ সালে চন্দ্রকোনার নীলগঞ্জ গ্রামে চলে এসেছিলেন। তখন বাবাকে পাঁচ একর জমি লিজ হিসাবে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই জমির আজও রেকর্ড করা যায়নি। যদি রাজ্যে এনআরসি চালু হয় আমরা খুব সমস্যায় পড়ে যাব।” কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন উদ্বাস্তু পরিবারগুলি। চন্দ্রকোনা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি হীরালাল ঘোষ বলেন, “বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর ঘোষণার পরই আতঙ্ক শুরু হয়েছে পরিবারগুলির। আমরা ওঁদের সবরকম সাহায্য করব বলে কথা দিয়েছি।” পরিবারগুলির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন চন্দ্রকোনার বিধায়ক ছায়া দোলই।
ছবি: সুকান্ত চক্রবর্তী
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.