নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: বাংলায় রাজনৈতিক হিংসায় বিজেপির যে সমস্ত কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি যাবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের ভোটপ্রচারে জনসভা করার পাশাপাশি দলের ‘শহিদ’-পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। সেভাবেই শাহর বাংলায় সফর কর্মসূচি তৈরি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বিজেপির এক প্রথম সারির কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, “পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসায় ১৩০ জন বিজেপি সদস্য শহিদ হয়েছেন। যার অধিকাংশ ঘটেছে শাহ দলের সভাপতি থাকার সময়েই। সেই বিষয়টি শাহর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছে।” সে কারণেই তিনি শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের মনোবল বাড়াতে চান। বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে শাহ ঘনঘন বাংলায় যাবেন বলেই ঠিক রয়েছে। তাই সেই সময়েই দলের জনসভা, রোড-শো’র মতো প্রচারের সঙ্গে ‘শহিদ’ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎপর্ব সেরে ফেলার জন্য শাহ নিজেই ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন।
ভোটব্যস্ত পশ্চিমবঙ্গে শাহর আগামী দিনের এই কর্মসূচি তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি যে রাজনৈতিক হিংসার বিষয়টি নিয়ে সরব হবে, তা বহুদিন আগে থেকেই ঠিক হয়েছে। শাহ নিজে বিভিন্ন সময়ে তো বটেই, এমনকী, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও (Narendra Modi) বাংলায় রাজনৈতিক হিংসায় দলের কর্মীদের প্রাণ হারানোর বিষয় নিয়ে সরব হয়েছেন। নির্বাচনের মুখে সেই বিষয়টিকেই যে বিজেপি আবার সকলের সামনে নিয়ে আসতে চাইছে শাহর কর্মসূচিই তার সব থেকে বড় উদাহরণ। শাহ শহিদ পরিবারে গেলে একদিকে যেমন রাজনৈতিক হিংসার বিষয়টি সামনে আসবে, অন্যদিকে দলের কর্মী সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধি পাবে, যা নির্বাচনের আগে অত্যন্ত জরুরি বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবির।
এদিকে, রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে বিজেপি ততই আগ্রাসী রণকৌশল নিয়ে এগোতে চাইছে। রাজ্যে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হবেই এবং বিজেপি (BJP) ২০০-র বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসবে বলে কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি। তাঁরা বলছেন, রাজ্যের মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে বিজপিকে ভোট দেবেন এবং রাজ্যর বাংলাভাষী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বড় অংশও তাঁদেরই ভোট দেবেন। রাজ্যের মহিলা ভোটাররাও তাঁদের সঙ্গেই রয়েছেন। দিল্লির এক শীর্ষনেতা বলছেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের রোড শো থেকে শুরু করে জনসভায় প্রচুর মহিলার উপস্থিতি তার বড় উদাহরণ। তবে, কলকাতা-সহ আশপাশের জায়গায় যে লড়াই ‘কঠিন’ সে কথাও মেনে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ প্রসঙ্গে এক কেন্দ্রীয় শীর্ষনেতা বলেছেন, “কলকাতা ও সংলগ্ন, যেটাকে প্রেসিডেন্সি অঞ্চল বলা হয় সেখানকার ১০৯টি আসনে আমাদের লড়াই যে কঠিন, আমরা তা জানি। তবে, আমরা সেখানে এগিয়েই রয়েছি।” কোনও জায়গাতেই তাঁরা কোনও রকম ঢিল দেবেন না, এমন বার্তাই দিয়েছেন তিনি। দার্জিলিংয়ের তিনটি আসনেই যে বিজেপি এবারে প্রার্থী দেবে সে কথা জানিয়েছেন শীর্ষস্তরের কেন্দ্রীয় নেতা। বিমল গুরুং তাঁদের ছেড়ে চলে গেলেও তাঁকে নিয়ে কোনও অভিযোগ করতে নারাজ বিজেপি নেতৃত্ব। তবে, বিমল যে কারণ দেখিয়ে বিজেপির সঙ্গ ছেড়েছেন সেই অভিযোগ ঠিক নয়, বলছেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে সেই কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্য, “গোর্খাল্যান্ডের দাবির কথা আমরা কখনও মানিনি। তবে, আমরা বলেছিলাম যে সেখানকার শাসনে গোর্খাদের অংশীদারি থাকা দরকার। আর বিমল কী করবেন! কারও বিরুদ্ধে যদি ১২০০ মামলা থাকে তাহলে তাঁর পক্ষে এমনটা করাই স্বাভাববিক। আমরা পাহাড়ে ভোটপ্রচার গিয়ে এটাই বলব যে আমাদের বিমলের উপর কোনও ক্ষোভ নেই। আর নির্বাচনের পরে তারা যদি আমাদের সঙ্গে আসতে চায় তাতেও আমাদের আপত্তি নেই।” বিজেপির দলীয় ইস্তেহার রাজ্যের মানুষের পরামর্শের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হবে বলে এদিন জানিয়েছেন আরেক শীর্ষনেতা। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “নন্দীগ্রাম থেকে যে ১২০০ পরামর্শ এসেছে তার মধ্যে ন’শোটিতে টাটাকে রাজ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য আবেদন করা হয়েছে। আমাদের ইস্তাহারে রাজ্যের শিল্পনীতি নিয়ে বিস্তারিত অংশ থাকবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.