বৈঠকে বঙ্গ বিজেপির কোর কমিটি।
রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: মাত্র ছ’মাসের মধ্যেই লোকসভা ভোটের সাফল্যের হাওয়া বাংলায় চুপসে যাওয়ার কারণ খুঁজতে আজই বৈঠকে বসতে চলেছে বঙ্গ বিজেপির কোর কমিটি। তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে হারের কারণ কী কী হতে পারে তার বুথভিত্তিক রিপোর্ট জেলা সভাপতিদের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে। আজ শনিবার সেই রিপোর্ট জমা পড়ছে রাজ্য দপ্তরে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর কাছেও পর্যালোচনা রিপোর্ট পাঠানো হবে।
সূত্রের খবর, রাজ্য শাখার কাছ থেকে দ্রুত রিপোর্ট চেয়েছেন শাহ। তাই আজই উপনির্বাচনে বিপর্যয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে বৈঠকে বসছেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় নেতা রাহুল সিনহা, মুকুল রায়রা। এদিকে, আগামী ৭ ডিসেম্বর একটি বেসরকারি অনুষ্ঠানে কলকাতায় আসার কথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর। সেই সফরসূচিতে দলের রাজ্য নেতাদের সঙ্গে আলাদা করে শাহ বৈঠক করতে পারেন। আরেকটি জল্পনাও শুরু হয়েছে রাজ্য বিজেপির অন্দরে। ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে রাজ্য কমিটিততে রদবদল হওয়ার কথা। উপনির্বাচনে পরাজয়ের প্রভাব সেই রদবদলের ক্ষেত্রেও পড়বে কি না সেটাই জল্পনার বিষয়।
লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে কালিয়াগঞ্জের মতো আসনে ৫৭ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকায় এই আসন জেতা নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না বিজেপির। কিন্তু সেখানে তৃণমূল ৫৭ হাজার ভোট ‘কভার’ করে ২,৩০৪ ভোটের ব্যবধানে বিজেপিকে হারিয়ে দিয়েছে।
দলীয় সূত্রে খবর, কালিয়াগঞ্জে হারের পিছনে এনআরসি ইস্যু কাজ করেছে। কালিয়াগঞ্জে ৯টি পঞ্চায়েতই বিজেপির দখলে। তারপরও সেখানে হার কেন? এক রাজ্য নেতার কথায়, পঞ্চায়েতের কাজ নিয়ে বিজেপি কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষদের মধ্যে একটা ক্ষোভ কাজ করেছে। পঞ্চায়েত প্রধানদের ভূমিকা ঠিক ছিল না বলে মনে করছে রাজ্য নেতৃত্ব। তার প্রভাব ভোটে পড়েছে। খড়গপুরের মতো নিশ্চিত আসনেও হার হওয়ায় স্তম্ভিত বিজেপি নেতৃত্ব। রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষনেতা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, সেখানে দলীয় প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। খড়গপুরে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও ভোটের ফলে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছে দলের একাংশ। এছাড়া, বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছিল দিলীপ ঘোষ বিধায়ক থাকাকালীন খড়গপুরে কোনও উন্নয়ন হয়নি। এ ব্যাপারে দিলীপ ঘোষের যুক্তি, ‘যদি উন্নয়নই না করলাম তাহলে লোকসভা ভোটে খড়গপুর থেকে লিড পেয়েছিলাম কী করে।’
কালিয়াগঞ্জ, করিমপুরে যেমন এনআরসি ইসু্যকে বিজেপির বিরুদ্ধে পুরোপুরি কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে তৃণমূল। গেরুয়া শিবিরের বড় অংশের মত, এনআরসি ইস্যু অনেকটাই প্রভাব ফেলেছে উপনির্বাচনে। ভোট কমেছে বিজেপির।
রাজ্য বিজেপির সহসভাপতি চন্দ্রকুমার বসু প্রকাশ্যেই মন্তব্য করেছেন যে, বাংলায় এনআরসি নিয়ে এত বেশি হইচই করাটা ঠিক হয়নি। এছাড়া, কালিয়াগঞ্জ তো বটেই, বিশেষ করে খড়গপুরে বুথস্তরে সাংগঠনিক দুর্বলতাও ছিল বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। নিচুস্তরে তৃণমূলের ভোট কৌশলের সঙ্গে টক্কর দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। লোকসভার প্রাপ্ত ভোট কেন উপনির্বাচনে ধরে রাখা গেল না তার কারণ খুঁজতেই চলছে কাটাছেঁড়া। লোকসভা ভোটে দুর্দান্ত ফলাফলের পর একটা আত্মসন্তুষ্টিও কাজ করছিল দলের একটা বড় অংশের মধ্যে। সেটাও বুমেরাং হয়েছে উপনির্বাচনে। কারও কারও আবার মত, প্রশান্ত কিশোরের টোটকার কাছেও অনেকটা হলেও হার মানতে হয়েছে তাদের। হারের কারণ নিয়ে শনিবার সারাদিনই মুরলীধর সেন লেনে চলেছে এরকমই নানা আলোচনা।
[আরও পড়ুন: পোস্টাল ব্যালটে ৩ কেন্দ্রে জয় বিজেপির, তৃণমূলের কপালে চিন্তার ভাঁজ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.