শেখর চন্দ্র, আসানসোল: চড়া ভাড়া নেওয়া হয়েছে অ্যাম্বুল্যান্সে। রোগীকে আসানসোল (Asansol) থেকে দুর্গাপুর (Durgapur) নিয়ে যেতে ভাড়া নেওয়া হয়েছে সাড়ে ১৭ হাজার টাকা! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। সালানপুর রূপনারায়ণপুরের বাসিন্দা সমাজকর্মী শুভদীপ সেন। করোনাকালে প্রচুর দুঃস্থ মানুষের পাশে থেকেছেন শুভদীপ। কিন্তু তাঁর নিজের পরিবারে যখন কোভিডের সংক্রমণ হল, তখন তিনিই এই ধরনের প্রতারণার শিকার হলেন।
জানা গিয়েছে, রূপনারায়নপুরের বাসিন্দা বছর সত্তরের জিতেন্দ্রনাথ সেনকে আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় দুর্গাপুরের সনোকা হাসপাতালে।মুমূর্ষু ওই কোভিড আক্রান্ত রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। অভিযোগ, রোগীর এই অসহায়তার সুযোগ নিয়ে ভাড়া নেওয়া হয় ১৭ হাজার টাকা। অক্সিজেন সিলিন্ডারের একটি বেলুনের জন্য বাড়তি নেওয়া হয় আরও ৫০০ টাকা। সম্পূর্ণ এই অনৈতিক ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন জিতেন্দ্রনাথ সেনের ছেলে শুভদীপ সেন। গত মাসের ১৭ তারিখ এই ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময় বাড়িতে তাঁর মা অসুস্থ ছিলেন। কোনওক্রমে বাবাকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন। মাকে সুস্থ করে তোলেন।
ঘরের অসুস্থতা সামাল দেওয়ার পরই তিনি নামলেন প্রতিবাদের পথে। সেদিনের ঘটনা নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনী মাজিকে অভিযোগ জানালেন শুভদীপ। সেই অ্যাম্বুল্যান্সের বিল, ফোন নম্বর ও অ্যাম্বুল্যান্সের নম্বর সমস্ত বিস্তারিত তথ্য দিয়ে অভিযোগটি করেন তিনি। শুভদীপের অভিযোগ সাধারণ অ্যাম্বুল্যান্সে আসানসোল থেকে দুর্গাপুর ৪০ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য অক্সিজেন সাপোর্ট নিয়ে কোভিড রোগীকে নিয়ে গেলে আড়াই হাজার টাকা নেওয়া হয়। এই ধরনের ভেন্টিলেশন অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়াও ৮ হাজার টাকার বেশি নেওয়া হয় না। কিন্তু সেদিন ওই পরিস্থিতিতে সাড়ে ১৭ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছিল। কোনও আকুতিতে সাড়া দেওয়া হয়নি। বাবাকে বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত ওই পরিমাণ ভাড়া দিতে বাধ্য হই। শুভদীপ বলেন, এই অন্যায় ঘটনার বিচার চেয়ে আইনেরও দারস্থ হব।
বাবাকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে যে হয়রানির শিকার হয়েছিলেন শুভদীপ সেই ঘটনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে। এরপর ঋদ্ধিমা মাদার অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অ্যাম্বুল্যান্সটিকে খুঁজে বের করা হয়। ওই অ্যাম্বুল্যান্সটি দাঁড়িয়ে ছিল আসানসোলের একটি হাসপাতালের কাছে। কিন্তু সামনে মালিক বা চালক কেউ আসেননি। ফোনে যোগাযোগ করা হয় অ্যাম্বুল্যান্স মালিক উদয় রাউতের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আসানসোল থেকে দুর্গাপুর ভ্যান্টিলেশন সাপোর্ট হলে সাড়ে ৭ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। কেন সাড়ে ১৭ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে আমার জানা নেই।” পরে আবার ফোন করে বলেন, “ওই টাকা রোগীর পরিবারকে ফেরত দিয়ে দেবেন।” যদিও অভিযোগকারী শুভদীপ সেন বলেন, “অসহায় মানুষকে এভাবে লুট করা হচ্ছে। এই অন্যায় ঘটনার অভিযোগ যখন জানানো হল, মিডিয়া জানতে পারল, তখনই টাকা ফেরতের কথা বলছে মালিক। এই অন্যায় ঘটনার শেষ দেখে ছাড়ব।” এই প্রসঙ্গে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনী মাজি জানান যে, তিনি অভিযোগটি পেয়েছেন। এই গাড়ির নম্বর দিয়ে আরটিও অফিসে অভিযোগটি পাঠিয়েছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.