শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: দেশের জাতীয় সংগীত কোনটি? জাতীয় ফুল ও পশুর নাম কি? উত্তর ঠোঁটের ডগায়। জিজ্ঞেস করতেই গড়গড়িয়ে বলে দিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজধানীর নাম। আপাতভাবে তেমন কিছু নয় বলেই মনে হবে। কিন্তু উত্তরদাতার বয়স যদি হয় মাত্র একুশ মাস, তখন থমকে দাঁড়াতে হয়। এই বিস্ময়কর শিশু ময়ূখ বর্মনের দেখা মিলল উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ব্লকের সীমান্তবর্তী দাসপাড়ায়।
[ আরও পড়ুন: পুরসভায় আস্থাভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগে বনগাঁয় প্রতিবাদ মিছিল বিজেপির ]
বলতেই পারেন প্রডিজি। ব্যতিক্রমী শিশু মৌসুমী চক্রবর্তীর কথা অনেকের জানা। তবে সে বয়সে অনেকটাই বড় ছিল। মুখে মুখে কঠিন অঙ্ক করে ফেলত পুরুলিয়ার আদ্রার খুদে মেয়েটি। গোটা রাজ্যে তখন সে বিস্ময় বালিকা। ১৯৯১ সালে মাত্র সাড়ে আট বছর বয়সে মাধ্যমিক দেয়। কিন্তু ময়ূখ তো দুধের শিশু। মায়ের কোলে শুয়ে শুয়েই জটিল সব প্রশ্নের গড়গড়িয়ে সঠিক উত্তর দিচ্ছে। হঠাৎ শুনলে বিশ্বাস করা কঠিন। তাই কৌতুহল মেটাতে অনেকেই তাকে প্যাঁচে ফেলার প্রশ্ন করছেন। কিন্তু অবলীলায় শিশু বলে দিচ্ছে সব উত্তর। যেমন, চোপড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মহম্মদ আজারুদ্দিন। তিনি বলেন, “শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। নিজেই দাসপাড়ার বাড়িতে চলে যাই। সেখানে ওই শিশুর কথা শুনে অবাক। ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের রাজধানীর নাম নির্ভুল বলছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নামও বলে দিচ্ছে।” একই অভিজ্ঞতা হয়েছে চোপড়া বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সাহার। তিনি বলেন, “শুনে শিশুটিকে দেখতে গিয়েছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম দেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম। অবাক কাণ্ড। ঠিকঠাক বলে দিল।” ঘটনার কথা শুনেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা। তিনি বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু দেখার সুযোগ এখনও হয়নি।”
এখনও দু’বছর বয়স পূর্ণ হয়নি। এই বয়সে স্পষ্ট শব্দ উচ্চারণ করা দূরের কথা। অনেক শিশু কথাই বলতে পারে না। কিন্তু ময়ূখ অবলীলায় বিশ্বের নানা দেশের নাম সহ রাজধানীর নাম বলে দিচ্ছে। এমনকী ভারতে জাতীয় খেলা থেকে শুরু করে জাতীয় ফলের নামও। সেটা শুনতে কৌতুহলীদের ভিড় উপচে পড়ছে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকা দাসপাড়ার বর্মন বাড়ির উঠোনে। শিশুটির বাবা রাজু বর্মন পেশায় চিত্রশিল্পী। চোপড়া বাজারে সাইনবোর্ড লিখে জীবিকা নির্বাহ করেন। মা মীনাদেবী অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী। তাঁদের মেয়ে ডালিয়া বর্মন দাসপাড়া হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। কিন্তু কেমন করে এটা সম্ভব জানা নেই পরিবারের লোকজনের।
[ আরও পড়ুন: সদ্যোজাতকে খুন করে মাটিতে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগ, কাঠগড়ায় মা ]
এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন? কলকাতার এসএসকেএস হাসপাতালের স্নায়ু ও মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞ নিখিলেশ মণ্ডল জানিয়েছেন, এরকম মেধাসম্পন্ন শিশু বাস্তবে বিরল। তবে বুদ্ধাঙ্কের পরিমাণ নিঃসন্দেহে মারাত্মক হতে পারে। তাই একবার শুনলেই সবকিছু মনে রাখতে পারছে। সাধারণ অটিজম আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে এরকম স্মরণশক্তি দেখা যায়। সেক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয় হয়তো খুব উন্নত নয়। কিন্তু একবার কোনও বিষয় শুনলেও মস্তিস্কের গেঁথে রাখে। ভুলে যায় না। যেমন, গানের লিরিক একবার কানে শুনলে হুবহু গেয়ে যেতে পারে। কিন্তু এরা সাধারণত অন্যদিকে পারদর্শী হতে পারে না। এই শিশুদের ‘রোট মেমোরি’ বলা হয়। অর্থাৎ এরা কথা বলার সময় চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.