চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: ধস নেমেছে বহুবার। খোলামুখ খনি থেকে বেরিয়েছে আগুন। এত বিপদের পরও উইঢিবির পাশে মাতৃমন্দিরের কোনও ক্ষতি হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস দেবী তাদের রক্ষা করে চলেছেন। জামুড়িয়ার সিঙ্গারণ কালী প্রতিমার এই মাহাত্ম্যই এলাকার বাসিন্দাদের কাছে গর্বের বিষয়। তিন শতকের পুরনো কালীপুজো গোটা আসানসোলের দ্রষ্টব্য।
[বেগার খেটেই কালীপুজোয় ‘রাজঋণ’ শোধ করে মেটে সম্প্রদায়]
এলাকায় জনশ্রুতি, এক সময় ডাকাত ভবানী পাঠক এই জঙ্গলে ডেরা বেঁধেছিলেন। তখনই স্বপ্নাদেশে মা কালী জানান, জঙ্গলে উইঢিবিতে অধিষ্ঠান করছেন তিনি। সেই থেকে শুরু হয় মাতৃ আরাধানা। তবে বেলবাঁধ গ্রামের প্রবীণদের আর একটি মত আছে। তাদের মতে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সিঙ্গারণ কোলিয়ারি চালু করতে এসে ১২ হাত লম্বা চুল পেয়েছিল। অলৌকিক এই ঘটনা দেখে সেখানে কয়লা খাদান না করে, ৫০০ মিটার দূরে কোলিয়ারি চালু করেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা। বর্তমানে পুজোর দায়িত্বে রয়েছে তপসী এলাকার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। পরিবারের বর্তমান সদস্য সুবল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগে উইঢিবিটি অপরাজিতা গাছে ঢাকা থাকত। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার পুজোর দায়িত্ব নেওয়ার পরে সেখানে মন্দির তৈরির পরিকল্পনা হয়। কিন্তু দেবী স্বপ্নাদেশ দেন, কোনও ঘেরা জায়গায় তাঁর পুজো করা যাবে না। এরপর চার দিক খোলা আটচালার মন্দিরে পুজো চলে আসছে। সুবলবাবুর সংযোজন, পূর্বপুরুষদের থেকে জেনেছেন, উইঢিবি পরিষ্কার করতে গিয়ে তাঁদের পরিবারের এক সদস্য তিনটি চোখ ও কাঠের পাদুকা পান। ঢিবির পাশে মাটির বেদিতে তা আজও রাখা আছে।
[এককালের ত্রাস, এখনও ভক্তিভরে মা কালীর পুজো করেন এই প্রাক্তন ডাকাত সর্দার]
স্থানীয় বাসিন্দা হিরণ্ময় রায়চৌধুরি জানান, ১৯৬৮-৬৯ সাল পর্যন্ত জঙ্গল ঘেরা ওই কালীস্থানে পুজো করতে যেতেন তাঁর বাবা। তখনও ডাকাতদলকে তাঁর বাবা দেখেছেন। রাতে পাঁঠাবলি দিয়ে ভোগ খেয়ে ডাকাতদল ডাকাতিতে বেরোত। কেন ওই মন্দির জাগ্রত তার ব্যাখা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা মনোজয় চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, খোলামুখ খনি লাগোয়া ওই এলাকায় আগুন বা ধস নামলেও মন্দিরের কোনও ক্ষতি হয়নি। এলাকায় ফাটল ধরেছে। মাঝে মাঝে আগুন বের হয়। কিন্তু সিঙ্গারণ কালী মন্দির চত্বরে এতটুকু আঁচ আসেনি। এইসব ঘটনায় গ্রামবাসীদের ভরসা আরও বেড়ে গিয়েছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস ধস, গ্যাস, আগুন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে তাদের রক্ষা করেন কালী মাতা সিঙ্গারণ। বেলবাঁধ, জোরজোনাকি, তপসী, সিঙ্গারণ গ্রামের বাসিন্দারা ভিড় জমান কালীপুজোর রাতে। মহাধুমধাম করে হয় পুজো। নিত্যপুজো ছাড়াও কার্তিক মাসে ধুমধাম করে মন্দিরে পুজো হয়। আসানসোল মহকুমার পাশাপাশি ভিন জেলা থেকেও বহু মানুষ যোগ দেন এই মেলায়। কার্যত মিলনমেলায় পরিণত হয় এই উৎসব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.