চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: দেবী কোথায় ধরা দেন কেউ জানে না। কখনও তিনি ছোট্ট খুকি, কখনও যুবতী হিসাবে ভক্তের কাছে দেখা দেন। মা কালীর লীলা বোঝা ঘোর শক্ত। পশ্চিম বর্ধমানের কল্যাণেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও রয়েছে এমনই সব ঘটনা।
[কালীপুজোয় দর্শনার্থীদের ভরসা জোগাতে হাজির ‘শ্যামা’ অ্যাপ]
কল্যাণেশ্বরী কালী প্রতিষ্ঠার নেপথ্যের গল্প বেশ অদ্ভুত। শোনা যায় বহুকাল আগে ওই এলাকায় জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে এক শাঁখা বিক্রেতা যাচ্ছিলেন। সেই সময় জঙ্গলের মধ্যে জলাধারের পাশে পাথরে বসে থাকা এক যুবতী শাঁখারিকে ডেকে শাঁখা পরতে চান। নিজের পরিচয় হিসাবে ওই যুবতী বলে, সে সবনপুর গ্রামের সাধক দেবীদাস চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে। তাঁর বাবাকে যেন বলেন কুলুঙ্গিতে টাকা রাখা আছে। শাঁখারি দেবীদাসের কাছে দাম চাইতে গেলে তিনি অবাক হয়ে যান, কারণ তাঁর কোনও কন্যাই নেই। কিন্তু দেখেন কুলুঙ্গিতে টাকা রাখা আছে। তারপর শাঁখারিকে সঙ্গে নিয়ে ওই জলাধারে দেবীদাস গেলেও যুবতীর খোঁজে মেলেনি। কিন্তু যে পাথরে যুবতী শাঁখা পড়েছিলেন সেখানে পায়ের স্পষ্ট ছাপ মেলে। জনশ্রুতি, সাধক দেবীদাস বুঝতে পারেন মা কল্যাণেশ্বরী স্বয়ং কন্যার পরিচয় দিয়ে শাঁখা পরেছিলেন। চালনাদহের ওই ঘাটে জলাধার থেকে শাঁখা পরা দুটি হাতেরও নাকি দর্শনও দিয়েছিলেন দেবী। তখন থেকেই চালনাদহের ঘাটে শাঁখা দিয়ে কল্যাণেশ্বরীর পুজো হয়। শুধু তাই নয়, আজও দেবীর শাঁখা আসে দামোদরের শাঁখারি পরিবার থেকে। রাজা বা রাজপাট না থাকলেও, এখনও রাজবাড়ি থেকেই পাঠানো হয় নৈবেদ্য। প্রায় ৯ শতকের এই পুজোয় রাজার নামেই প্রথম সংকল্প করা হয়।
[নিমগাছই এখানে দেবী, কাটোয়ার অহঙ্কার ‘ঝুপোকালী’]
এই মন্দিরে প্রথম সিদ্ধিলাভ করেছিলেন কাপালিক দেবীদাস চট্টোপাধ্যায়। পাহাড় কেটে মন্দির বানানো হয়েছে। কথিত রয়েছে, এখানে গুহার মুখে দেবী অধিষ্ঠিত। ভক্তদের বিশ্বাস, মন্দিরে এখনও দেবীর পায়ের ছাপ রয়েছে। বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তে মা কল্যাণেশ্বরী মন্দিরে কোনও মূর্তি পুজো হয় না। মন্দিরের প্রধান সেবাইত দিলীপ দেওঘড়িয়া জানান, জঙ্গলে বাঘের ভয়ে দিনের বেলায় আরতি হয়ে যেত। সেই পরম্পরা অব্যাহত রয়েছে। অন্য সময় সন্ধ্যা ৬টায় দরজা বন্ধ হলেও, কালীপুজোয় সারারাত খোলা থাকে মন্দিরের দরজা। শোনা যায়, রাজা বল্লাল সেন ছিলেন এই কাপালিকের ভক্ত। সাধকের নির্দেশ মেনে বল্লাল সেন অধুনা সবনপুরে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। সেখানে দেবী শ্যামারূপার আরাধনা শুরু হয়। তবে সেখানে জনবসতি বেড়ে যাওয়ায়, আওয়াজ-কলহে বিরক্ত হয়ে শ্যামারূপী কল্যাণেশ্বরী নিরিবিলি গভীর জঙ্গলে এক গর্তে আশ্রয় নেন। তখন থেকেই দেবী ওই জায়গাতেই পূজিতা হচ্ছেন। মাইথন জলাধার তৈরির সময় চালনাদহের ঘাটের পাথর জোর করে তুলতে নাকি এক সাহেবের মুখে রক্ত উঠেছিল। তারপরই নাকি সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অতীতে বহু অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে কল্যাণেশ্বরী মন্দিরে, এমনটাই দাবি দিলীপবাবুর। দর্শনার্থীরা এই সব ঘটনা শোনার জন্য ভিড় করেন মন্দির প্রাঙ্গণে। কালীপুজোর দিনেও এখানে সারারাত পুজো হয়। হয় ছাগ বলিও। এই মন্দিরকে ঘিরে এখানে কল্যাণশ্বেরী-মাইথন ভ্রমণকেন্দ্রও গড়ে উঠেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.