বিপ্লব দত্ত, রানাঘাট: দস্যুর তেজ, রাজার ইচ্ছে। দুইয়ের যোগসূত্রে কালীক্ষেত্রর প্রতিষ্ঠা। এই প্রসঙ্গের অবতারণা রানাঘাটের সিদ্ধেশ্বরীতলার জন্য। রানা ডাকাতের পূজিতা মা রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পান। কয়েক শতকের এই মাতৃমন্দির নদিয়ার জেলার অন্যতম দ্রষ্টব্য।
[লঙ্কা থেকে মাত্র ২০ দিনে রাম অযোধ্যায় ফিরলেন কী করে?]
রানাঘাট। এই জনপদের নামকরণ নিয়ে কত মত। কারও মতে রন বা রানা ডাকাতের নামে একটি ঘাঁটি ছিল। যা পরিচিত ছিল রানাঘাঁটি নামে। সেই থেকে রানাঘাট। অন্য একটি মতে নদিরায় রাজমহিষীর ঘাট অর্থা রানির ঘাট থেকে হয়েছে রানাঘাট। আবার কেউ বলেন রানা মানসিংহ যশোহর আক্রমণের সময় চূর্ণী নদীর তীরে নেমেছিলেন। সেই থেকে নাম রানাঘাট। যার সঙ্গে জড়িয়ে ঐতিহ্যবাহী সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। মাতৃ আরাধানার পাশাপাশি মহাদেব এবং রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহর নিত্য পুজো হয়। বর্তমান মন্দির যে এলাকা তা এক সময় ভরানেতলা নামে পরিচিতম ছিল। তখন চারিদিকে ছিল ঘন জঙ্গল আর বিশাল বটগাছ। ১৭৯৯ সালে পালচৌধুরী বংশের দুই বংশধর কৃষ্ণচন্দ্র ও শম্ভুচন্দ্র রানাঘাট পরগনা কিনেছিলেন। পত্তন হয় রানাঘাটের। তারপর মাতৃ আরাধনায় গতি পায়। চৌধুরীরদের নগর প্রতিষ্ঠারও বেশ কিছু বছর আগে ওই এলাকায় রন নামের এক ডাকাত ত্রাস হয়ে উঠেছিল।
[দশভুজা মহাকালী, অন্যরকম দেবীদর্শন ইংলিশবাজারে]
কথিত আছে সাধক রামপ্রসাদ মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়কে কথা দিয়েছিলেন মায়ের কাছে যাবেন। কিন্তু আসতে গিয়ে রামপ্রসাদকে বন্দি করে রানা ডাকাত। বলি দেওয়ার আগে সাধকের গানে মোহিত হয়ে গিয়েছিল ওই দস্যু। রক্ষা পান রামপ্রসাদ। সিদ্ধেশ্বরী থেকে কিছু দূরে চূর্ণী নদীর সংযোগকারী বাচকোর নামে একটি খাল ছিল। সেই খাল দিয়ে ব্যবসায়ীরা মালপত্র নিয়ে যেত। রানা ডাকাতের নিশানায় ছিল এইসব ব্যবসায়ীরা। তাদের মালপত্র লুট করতে যেতে রানা ডাকাত। সিদ্ধেশ্বরী মাকে পুজো দিয়ে ডাকাতিতে বেরোত সে। এমনকী নরবলিও দিত। নরবলি দিয়ে দেহ কুয়োর মধ্যে ফেলে দেওয়া হত। জানা যায়, কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নাদেশ পান রন ডাকাতের পূজিতা দেবী অনাবৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। তারপর রাজার উদ্যোগে মূর্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুজোর্চনার জন্য বাংলাদেশের যশোহর থেকে আনা হয় সেবাইতদের। ব্রিটিশ জমানায় কোনও এক সাহেব একবার প্রাণভয়ে মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। দেবালয়ে বিধর্মী প্রবেশের কারণে সংস্কারাচ্ছন্ন সাধারণ মানুষ দেবীমূর্তি বিসর্জন দিয়ে দেয় এবং মন্দির ভেঙে ফেলা হয়।
[সাধক রামপ্রসাদের জীবনের এই ৩ কাহিনিতে আজও বিস্মিত ভক্তরা]
মন্দিরের ইতিহাস বলে ভোলানাথ ভট্টাচার্য ছিলেন প্রথম সেবাইত। বালানন্দ স্বামী মহারাজের শিষ্য ছিলেন ভোলানাথ। গুরুর আদেশে তিনি মায়ের পাথরের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এর জন্য ভোলানাথ বারাণসী থেকে পাথরের মূর্তি এনে পুজো শুরু করেন। নতুন করে মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়। মাঘ মাসের ২৯ তারিখ নবকলেবরে সূচনা হয়েছিল মন্দিরের। নিত্যপুজোর পাশাপাশি চারদিনের বাসন্তী পুজো হয় মহা সমারোহে। দুশো বছরের প্রাচীন এই মন্দিরে প্রতিমা কষ্টিপাথরের তৈরি। মূর্তির উচ্চতা তিন হাত। রয়েছে সাদা রঙের শ্বেতপাথরের মহাদেবের মূর্তি। প্রতি বছর মূর্তি সংস্কার করা হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.